কেন শুক্রের বায়ুমণ্ডল গ্রহের চেয়ে ৬০ গুণ দ্রুত ঘোরে

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের অস্বাভাবিক দ্রুত ঘূর্ণন বা সুপাররোটেশন এর কারণ। অবশেষে এক নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন। তাদের মতে, সূর্যের তাপে সৃষ্ট দৈনিক বায়ু-জোয়ার হলো শুক্রের এই প্রবল ঝড়ো হাওয়ার প্রধান চালিকা শক্তি।

শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল এত দ্রুত ঘোরে যে এর বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১০০ মিটারেরও বেশি, যা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেনের গতিকেও ছাড়িয়ে যায়। এই তীব্র বাতাস মাত্র চার পৃথিবী দিনেই পুরো গ্রহকে একবার ঘুরে আসে। অথচ গ্রহটির নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় লাগে বিশাল ২৪৩ পৃথিবী দিন। গ্রহের পৃষ্ঠের চেয়ে বায়ুমণ্ডলের এই অনেক দ্রুত ঘূর্ণনকেই বিজ্ঞানীরা সুপাররোটেশন বলে অভিহিত করেন।

দীর্ঘদিনের গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, সূর্যের তাপে সৃষ্ট দৈনিক বায়ু-জোয়ার (Diurnal Tide) এই অস্বাভাবিক দ্রুত বাতাসের পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখে।

এই জোয়ার হলো বায়ুমণ্ডলে প্রতিদিনের তাপের প্রভাবে সৃষ্ট ওঠানামা। যেহেতু শুক্রগ্রহ তার অক্ষের ওপর অত্যন্ত ধীরে ঘোরে, তাই গ্রহটির দিনের অংশে সূর্যের তাপ বিশাল সময় ধরে জমা হয় এবং এই তাপই একটি শক্তিশালী জোয়ার তৈরি করে, যা বায়ুমণ্ডলকে দ্রুতগতিতে ঘুরিয়ে দেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যদিও সেমিডায়ার্নাল টাইড (দিনে দুবার তাপজোয়ার), গ্রহজ তরঙ্গ এবং উত্তর-দক্ষিণমুখী বায়ুপ্রবাহের মতো অন্যান্য কারণও এই প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে, তবে দৈনিক বায়ু-জোয়ারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি।

এই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা ২০০৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ভেনাস এক্সপ্রেস এবং জাপানের আকাতসুকি উপগ্রহ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার করেছেন। রেডিও তরঙ্গের বেঁকে যাওয়া (রেডিও অকালটেশন) বিশ্লেষণ করে শুক্রের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়। পাশাপাশি, সুপাররোটেশন প্রক্রিয়াটি কীভাবে তৈরি হয় তা পরীক্ষা করার জন্য উন্নত কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করা হয়েছিল।

নতুন এই তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের তাপের প্রভাবে সৃষ্ট দৈনিক জোয়ার শুক্রের বায়ুমণ্ডলে শক্তি সঞ্চালন করে, যা বাতাসকে চক্রবাতের গতিতে ছুটে চলতে সাহায্য করে, এমনকি গ্রহটি নিজে ধীরগতিতে ঘুরলেও।

বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এই তাপজোয়ার কীভাবে কাজ করে তা বোঝার মাধ্যমে শুক্রের বায়ুমণ্ডল এত দ্রুত ঘোরার একটি পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া গেল। পাশাপাশি, এই আবিষ্কার অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং তাদের জটিল আবহাওয়ার রহস্য ভেদ করার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।