নানা বিষয় নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের টানাপোড়েন চলছেই। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। এ ছাড়া অনেক বছর ধরে নানা অবরোধ ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় আছে তেহরান। কিন্তু এসবে যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। প্রতিনিয়তই নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে ইরান।
এবার অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে নিজেদের বলে দাবি করেছে তেহরান। শুধু তাই নয়, ওই মহাদেশে সামরিক স্থাপনা গড়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহরাম ইরানি এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অ্যান্টার্কটিকার মালিক ইরান সরকার এবং সেখানে সামরিক স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা আছে তাদের। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করা হয়।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার। ইরানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সাক্ষাৎকারটি সেই সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর দৃষ্টিগোচর হয়নি। সম্প্রতি ফক্স নিউজে সাক্ষাৎকারটি প্রচার হওয়ার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সংস্থা মিডল ইস্ট মিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এমইএমআরআই।
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে ইরানের এমন দাবি পশ্চিমা বিশ্বকে রীতিমতো অবাক করেছে। সাক্ষাৎকারে দৃঢ়তার সঙ্গে রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহরাম ইরানি বলেন- দক্ষিণ মেরুতে আমাদের সম্পত্তিগত অধিকার আছে। সেখানে ইরানের পতাকা উত্তোলনের পরিকল্পনা আছে আমাদের। সেই সঙ্গে ইরানের সামরিক এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথাও ভাবা হচ্ছে।
গত মাসে জর্ডানে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন। এরপর ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডারের এই দাবি নতুন করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কাতারে রাখা ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৬০০ কোটি ডলার স্থগিতের আদেশ সম্প্রতি তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের দাবির সঙ্গে এ সিদ্ধান্তের সংযোগ নিয়েও ভাবছেন অনেকে।
অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর দক্ষিণতম ও সবচেয়ে কম জনবহুল মহাদেশ। এটি কুমেরু বৃত্তের প্রায় সম্পূর্ণভাবে দক্ষিণে অবস্থিত এবং চারিদিকে দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত, যা কুমেরু মহাসাগর নামেও পরিচিত। এই মহাদেশটির উপর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু অবস্থিত। অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ এবং ইউরোপ মহাদেশের তুলনায় ৪০ শতাংশ বড়।
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের প্রায় বিয়াল্লিশ শতাংশ জায়গাকে অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্টার্কটিক সংস্থা তাদের নিজেদের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রাশিয়া এবং চীনও তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে সেই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ, মৎস্য আহরণ এবং মজুদকৃত জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়।
চীন অ্যান্টার্কটিক চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের উন্নয়নের জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে, যার অংশ হিসেবে ত্রিশ বছরের মধ্যে তিনটি অ্যান্টার্কটিক স্টেশন স্থাপন করেছে বেইজিং। অন্যান্য দেশের মতো নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে পিছিয়ে নেই রাশিয়া। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ নিয়ে রাশিয়ার রয়েছে সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা। ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় ভূ তাত্ত্বিক জরিপকারী সংস্থা রাশিয়ান জিওলোজিয়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে অফসোর তেল এবং গ্যাস প্রাপ্তির কার্যক্রম শুরু করেছে।
এছাড়া তুরষ্ক সেখান নিজস্ব স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। সবার সঙ্গে তাল মিলয়ে ইরানও প্রভাব রাখার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে নিজেদের প্রভাবের বিষয়টিই জানান দিতে চাইছে তেহরান। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে সম্পদের অনুসন্ধান চালানোর নামে সেখানে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। বিভিন্ন পরাশক্তির দেশগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়া নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে।