শবেবরাতে যেভাবে এলো হালুয়া-রুটি!

ইসলাম ধর্মে শবে বরাত মহিমান্বিত এক রাত। হাদিস অনুসারে এই রাত দোয়া কবুল, ক্ষমা প্রার্থনাসহ মহান আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত। একাধিক হাদিসে এসেছে এই রাতে লেখা হয় সৃষ্টিকূলের ভাগ্য। বাংলাদেশে মহা আয়োজনে উদযাপিত হয় শবে বরাত। বান্দা তাঁর মনের বাসনা মহান আল্লাহর কাছে পেশ করেন। সারারাত ইবাদত-বন্দেগিতে পুরো রাত কাটিয়ে দেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। 

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত। বরাত মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বরাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশে রাতটি শবে বরাত নামেই পরিচিত। 

মহিমান্বিত এ রাত প্রসঙ্গে ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থসহ অধিকাংশ হাদিসগ্রন্থে উল্লেখ আছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবান তথা শবে বরাতের রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করে দেন।

হযরত আলী ইবনে আবী তালেব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে শবে বরাত প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিবসে রোজা পালন করবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন- তোমরা কে আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করব। কে আছো রিযিক প্রার্থনাকারী আমি তাকে রিযিক দান করব। কে আছো বিপদপ্রস্থ, আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো, অসুস্থকে সুস্থতা দান করব। এভাবে চলতে থাকে শবে রবাতের ফজর পর্যন্ত।

তবে মহিমান্বিত শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকূলের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও এর ছায়ার বাইরে থাকেন কিছু সংখ্যক বান্দা। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করেন। তবে মুশরিক, হিংসুক, জাদুকর, ব্যভিচারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান ও অন্যায়ভাবে হত্যাকারীকে ক্ষমা করেন না।

শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় ঘরে ঘরে নানা আয়োজন হয়। খাওয়া-দাওয়ায় থাকে বিশেষ আয়োজন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হরেক পদের হালুয়া আর রুটি। নিজেদের জন্য তো বটেই, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতেও হালুয়া-রুটি বিতরণ করার রীতি রয়েছে। তবে এই রীতি কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গের অংশ নয়। বরং প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে পবিত্র এই দিনটির আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়াই থাকে মূল উদ্দেশ্য।

ইতিহাসবিদরা জানান, নবাবদের আধিপত্য, মুসলমানদের আধিপত্য এবং ধর্ম পালন এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে প্রকাশ করতেই শবে-বরাতে বড় ধরনের উৎসবের আয়োজন হতো। পাকিস্তান আমলে শবে বরাতের দিন সরকারি ছুটি যুক্ত হয়। এতে আয়োজনের ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে খাবারের আয়োজনে মিষ্টি পদ রাখতেই হালুয়ার প্রচলন শুরু হয়। 

এ ছাড়া রাসুলল্লাহ (সা.) মিষ্টি খাবার খুব পছন্দ করতেন। তার উম্মতরাও মিষ্টি খাবার পছন্দ করেন। তার ধারাবাহিকতায় পবিত্র এই রাতে ইবাদতের সঙ্গে মিষ্টি পদ খাওয়ার রীতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।