যুক্তরাজ্য সরকার চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তথাকথিত ইসলামিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যাওয়া শামীমা বেগম আর ব্রিটেনে ফিরতে পারবেন না। অর্থাৎ তিনি আর দেশটির নাগরিক নন। ব্রিটিশ সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের এমন রায়ের ফলে রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিতে পরিণত হলেন শামীমা। ব্রিটিশ আদালতের বিরল এই রায় বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে সিরিয়ার একটি বন্দি শিবিরি অবস্থানরত এই শামীমা মূলত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। বাবা-মা যুক্তরাজ্যে থাকার সুবাদে ওখানেই শামীমার জন্ম। লন্ডনে বেড়ে ওঠা। বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও শামীমার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই। শামীমা যুক্তরাজ্য থেকে যখন পালিয়ে যান, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।
আইএসে শামীমা একা যাননি। তার সঙ্গে আরও গিয়েছিল বান্ধবী খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসি। খাদিজার বয়স ছিল ১৬, আমিরার ১৫। ধারণা করা হয়, খাদিজা মারা গেছেন, কিন্তু আমিরার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। ২০১৯ সালে সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে শামীমাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পাওয়া যায়, যখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর।
শামীমা বেগম তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আইএস-এর নিয়ম-কানুন ও শাসনের অধীনে ছিলেন। তুরস্ক হয়ে সিরিয়ার রাক্কায় পৌঁছানোর পর একজন ডাচ-বংশোদ্ভূত আইএস যোদ্ধার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেখানে তার তিনটি সন্তান হয়, যাদের সবাই মারা গেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘জিহাদি বধূ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন শামীমা। ঐসময় জাতীয় নিরাপত্তার কারণে ব্রিটিশ সরকার শামীমার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়।
প্রসঙ্গত, শামীমা নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে নিষিদ্ধ সংগঠন জেনেই তিনি আইএসে যোগ দিয়েছিলেন। পরে এও বলেছিলেন, যে এই দলে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি লজ্জিত ও দুঃখিত। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন শামীমা। সেই সঙ্গে জন্মদেশ যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান।
কিন্তু রায় শামীমার বিরুদ্ধে গেছে। রায়ে জানানো হয়, আইনগতভাবেই শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলো ব্রিটিশ সরকার। বর্তমানে সিরিয়ায় বসবাসরত শামীমা বেগমের যুক্তরাজ্যে ফেরত আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, শামীমা বেগমের মামলায় বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন হলেও তিনি নিজেই তার দুভার্গ্যের ভিত্তি রচনা করেছেন।
আদালতের এই রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন- ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করাটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে অগ্রাধিকার। সেটি করতে গিয়ে আমরা যেকোনো ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নেবো।
তাহলে শামীমা এখন যাবেন কোথায়? ব্রিটিশ সরকার শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করার পর বিষয়টি নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালেই। কাউকে রাষ্ট্রবিহীন করা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ। ওই সময় এই বিতর্ক উঠলে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয় শামীমা তার বাব-মার সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে পারেন।
কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, শামীমা বেগমকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, শামীমা বেগমকে আমরা চিনি না। শামীমা বেগমের জন্ম ব্রিটেন। ব্রিটেনে বড় হয়েছে, শিক্ষা দীক্ষা ব্রিটেনে। সে কোনোদিন বাংলাদেশে যায়নি। কখনো বাংলাদেশের নাগরিকত্বও চায়নি, তার বাব-মাও ব্রিটিশ নাগরিক। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে বলা যায়, তরুণী শামীমার বাকি জীবন রাষ্ট্রহীন অবস্থায়ই কাটতে পারে।