এপ্রিলের শুরু থেকে সারাদেশে দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র গরমের হলকায় সবচেয়ে বেশি বেহাল দশা বৃদ্ধ ও শিশুদের। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই অসুস্থ শিশুর ভীড় বাড়ছে। জ্বর,সর্দি ,ডায়রিয়া ,নিউমোনিয়া, টাইফয়েড,কলেরা ও বিভিন্ন রোগ নিয়ে প্রতিদিনই পাঁচশ'র-ও বেশি শিশু আসছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালটিতে ৬৯০ জন শিশু রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এছাড়া এর আগের ৭২ ঘন্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪৮৮ জন শিশু রোগী। তীব্র গরমের ফলে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
রাজধানীর নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম তার শিশুপুত্র আব্দুল্লাহ (৫) -কে নিয়ে আসেন শিশু হাসপাতালে। তিনি জানান,গত ৭ দিন ধরে জ্বর ও বমির সাথে পেট খারাপ হয় এবং পেটে পানি জমে। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করালে পরীক্ষার পর ডাক্তাররা টাইফয়েড জ্বর এর কথা জানান। এখন এই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে।
বরিশালের ঝালকাঠি থেকে আসমা আক্তার তার ৭ মাসের সন্তান হাফিজুল ইসলাম -কে নিয়ে এখন আছেন একই হাসপাতালে। তিনি জানান, ৫ দিন ধরে বাচ্চার জ্বরের সাথে বমি ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এখন শিশু হাসপাতালেই তার সন্তানের চিকিৎসা চলছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হলো তীব্র দাবদাহ। তারা বলছেন, বাইরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় শিশুর শরীরের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। শিশুরা বড়দের মতো আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে শিশুর শরীরে অতিরিক্ত ঘাম বা পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও উত্তাপে শরীরে ঘাম বের হওয়ায় শিশুরা দ্রুত ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এর ফলে শরীরের পেশিতে ব্যাথা দেখা দেয়। অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার ফলে শিশুর পাতলা পায়খানা ও পেটে পানি জমার সমস্যা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আফরোজ তাসলিমা খবর সংযোগ ডটকমকে বলেন , তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাচ্চাদের এখন ভাইরাল ফিভারটা (জ্বর) বেশি হচ্ছে যা জ্বরের সাধারণ ঔষধ নাপা,প্যারাসিটামলে সারছে না।
অভিভাবকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জ্বর নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। জ্বর হবার দুই তিনদিন পর তা কমতে শুরু করবে। বাচ্চাদের কিছু সময় পরপর তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে। ডাবের পানি, পরিমিত স্যালাইন পানি, শরবত, ফলের জুস ও বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে। প্রতিদিন গোসল করাতে হবে এবং দিনে ২/৩ বার ভিজা কাপড় দিয়ে গা মুছতে হবে। আর শিশুর শরীর যাতে না ঘামায় সেজন্য শীতল ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আতিকুল ইসলাম খবর সংযোগ ডটকমকে বলেন, হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। রাস্তার শরবত ও খোলা খাবার শিশুদের খাওয়ানো যাবে না।
এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে ফলে বাচ্চাদের বাইরে না নেওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন,শিশুদের ঢিলেঢালা ও সুতির পাতলা পোশাক পরাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুদের অতিরিক্ত ঘাম যেন না হয়। অতিরিক্ত ঘাম থেকে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ডায়রিয়ার সঙ্গে জ্বরের অথবা ঘণ্টায় তিনবারের বেশি বমি হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ তিনি।