বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের দশ মাসে কমেছে ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) পর্যন্ত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭০ কোটি ২৫ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) একইসময়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলার। কমেছে ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
রপ্তানিকৃত হোম টেক্সটাইলস পণ্যের মধ্যে রয়েছে- বিছানা চাদর, রান্নাঘরের টয়লেট লিলেন, তাবু, নতুন টুকরো কাপড়, স্ক্র্যাপ সুতা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোম টেক্সটাইল চলতি অর্থবছরের রপ্তানি হয়েছে ৭০ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আর সরকারের পক্ষ থেকে এ পণ্যটি রপ্তানির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৩১ কোটি ২৮ লাখ ডলার বা ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বিছানার চাদর ও রান্নাঘরের টয়লেট লিলেন
পণ্যটি চলতি ১০ মাসে রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একইসময়ে আয় হয়েছিল ৪১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয় কমেছে ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ সরকারের লক্ষমাত্রা ছিল ৪৩ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
তাবু
পণ্যটি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। যা আগের অর্থবছরের দশ মাসে আয় হয়েছিল ২৩ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। কমেছে ৫ কোটি ৩০ হাজার ডলার বা ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে এ পণ্যটি থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ছিল ২৬ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ সরকারের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কমেছে ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
নতুন টকরো কাপড় ও স্ক্র্যাপসুতা
এ পণ্যটি থেকে আলোচিত সময়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১৫ দশমকি ৩৩ শতাংশ। সময়টিতে রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
হোম টেক্সটাইলসের অন্যান্য পণ্য
চলতি অর্থবছরের দশ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যা আগের অর্থবছরের একইসময়ে আয় হয়েছিল ১৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। কমেছে ১০ কোটি ৫ লাখ ডলার বা ৫১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় পণ্যটির রপ্তানি কমেছে। একইসাথে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্যের দাম, সুতার দাম, পরিবহন ও জ্বালানি খরচের মতো অন্যান্য কারণে হোম টেক্সটাইল পণ্যের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য খরচ কমিয়ে আনা গেলে এ পণ্যটির আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের ১২৫টি দেশে বাংলাদেশ থেকে হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে সবচেয়ে বড় বাজার। আর হোম টেক্সটাইল রপ্তানির সাথে দেশের ১৫০টি প্রতিষ্ঠান জড়িয়ে থাকলেও পণ্যটি রপ্তানি করছে ৫০ থেকে ৬০টি প্রতিষ্ঠান।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হোম টেক্সটাইলস রপ্তানি হয়েছিল ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। পরের বছর পণ্যটি রপ্তানি আরো কমে ৭৬ কোটি নেমে আসে। এরপরের দুই বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়েছে যথাক্রমে ৪৯ শতাংশ রপ্তানি বেড়ে ১১৩ কোটি ডলারে এবং ৪৩ শতাংশ রপ্তানি বেড়ে ১৬২ কোটি মার্কিন ডলারে পৌছায়।
বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল এন্ড লিলেন ম্যানুফেক্টাচারার্স এক্সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান এম শাহাদাত হোসেন দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে তাতে পেরে ওঠা যাচ্ছে না। একইসাথে সুতার সম্প্রতি সুতার দাম ২৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে যে সম্ভবনা রয়েছে তা গত দুই অর্থবছরের দিকে তাকালে সেটা বোঝা যায়। বর্তমান বিশ^ পরিস্থিতি বিবেচনায় সুতার ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয় তবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগীতা সক্ষমতা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে চীন। দেশটির গত অর্থবছরে ১০ শতাংশ রপ্তানি কমে ৩ হাজার ৭৬৬ কোটি দাঁড়ায়। এরপর ভারতের রপ্তানি আয় ৯ দশমকি ৮৮ শতাংশ কমে ৬০২ কোটি ডলারে এবং পাকিস্তানের রপ্তানি আয় ২ দশমকি ১৭ শতাংশ বেড়ে ৫৬৪ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।