জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের একটি সফল প্রচেষ্টা। হাইকোর্টের একটি রায়ের উপর ভিত্তি করে এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে কমিশন নিয়ে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মালিক ফিদা আব্দুল্লাহ খান বলছেন, নদী রক্ষা কমিশন আইনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তিনি বলেন, নদী রক্ষা কমিশনের কাজ হলো নদীর দখল, দূষণ রোধ করা এবং নাব্যতা রক্ষা করা। কিন্তু এসব কাজ করার জন্য যদি কমিশনের ক্ষমতা না থাকে তাহলে তা প্রয়োগ করা কঠিন। এজন্য নদী রক্ষা কমিশন আইনের সংশোধনের দরকার বলে মত দেন তিনি।
মালিক ফিদা আব্দুল্লাহ খান বলেন, 'সত্যিকারভাবে কমিশনের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।'
দৈনিক খবর সংযোগের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এই সদস্য।
মালিক ফিদা আব্দুল্লাহ খান বলেন, 'কমিশন এখন শুধু নদীর দখল ও দূষণের বিষয়ে জনগণকে এবং সরকারের পলিসি লেভেলে অবহিত করতে পারে। কিন্তু যে নদী দখল করেছে কিংবা দূষণ করেছে তার বা তাদের বিরুদ্ধে কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হয়নি। এটা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বড় একটা দুর্বলতা।'
'যেটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটুকুরও আমরা সঠিকভাবে সদ্ব্যবহার করতে পারছি না। এটা করতে না পারার একটা বড় কারণ হলো সঠিক তথ্যের অভাব ও লোকবলের স্বল্পতা। নদী রক্ষা কমিশনে যদি পর্যাপ্ত তথ্য থাকত তাহলে অনেকগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। নদীর দখল ও দূষণের বিষয়ে মামলা করতে গেলে আইনজীবীর প্রয়োজন হয়। একই সাথে প্রকৃত অর্থেই কেউ নদী দখল কিংবা দূষণ করেছেন কি না সেজন্যে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হয়,' এভাবেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন তিনি।
সমস্যাগুলো ব্যাখ্যা করে মালিক ফিদা আব্দুল্লাহ খান বলেন, 'যেমন একটি নদীর সিএস বা আর এস খতিয়ান অনুসারে নদীটি কতখানি চওড়া ছিল তা দেখে নদীটি কতখানি দখল হয়েছে তা সহজে বের করা যায়। নদী রক্ষা কমিশনের ডাটাবেজ ও লোকবল থাকলে কমিশন এসব বিষয়ে অনেক কিছু করতে পারত।'
'যদি কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানো যেত তাহলে কমিশনের আইনে যাই থাকুক না কেন তার ভিত্তিতে আরও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল,' যোগ করেন তিনি।
নদী বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, 'তারপরও আমরা যে কিছু করছি না, তা নয়। কমিশন নদী দখলকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় কিছু ছোট-খাটো ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু কমিশনের ওয়েবসাইটে নদী দখলকারীদের এই তালিকা প্রকাশ অনেক বড় একটি বিষয়।'
মালিক ফিদা আব্দুল্লাহ খান বলেন, 'জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে টেকনিক্যাল লোকবল খুব একটা নেই। সে কারণে কমিশনকে অন্য সংস্থার উপর নির্ভর করতে হয়। যেমনঃ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) উপর। উনারা হচ্ছেন নদী রক্ষা কমিশনের প্রধান শক্তি। নদীর প্রকৃত সংখ্যা, দখল ও দূষণের সাথে জড়িত বিষয়গুলো এসব হাতের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।'
সমস্যাগুলোর সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখন নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও-গণ যেসব কাজ করছেন তাতে সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে যদি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে এ কাজে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হতো তাহলে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওগণ এসব কাজ আরও সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারতেন।'
'এই জায়গাগুলোতে সরকার যদি একটু সুনজর দেয় তাহলে আমি মনে করি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারবে,' মত প্রকাশ করেন তিনি।
মালিক ফিদা আব্দুল্লাহ খান বলেন, 'নদী রক্ষা কমিশন নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছে। আগে যেমন কেউ কোনো চিন্তা না করেই নদী দখল করে ফেলত, এখন ব্যাপারটা তেমন নেই। এখন কেউ নদী দখল কিংবা দূষণ করলে সাথে সাথে সেই দখল ও দূষণকারীর বিষয়ে নদী রক্ষা কমিশনকে জানিয়ে দিচ্ছেন কেউ না কেউ। কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে। দখল ও দূষণের বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানালে তিনি সেটির ব্যবস্থা নেন। অ্যাকশনে যান।'
তিনি বলেন, 'জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে বিদ্যমান আইনে যেটুকু ক্ষমতায়ন করা হয়েছে তার ভিত্তিতে বিগত দিনগুলোতে কমিশন বেশ খানিকটা কাজ করেছে। এখন যদি আমরা বিদ্যমান আইনকে সংশোধন করে কমিশনকে আরও শক্তিশালী করতে পারি, ক্ষমতায়ন করতে পারি, আর্থিক বাজেট দিতে পারি তাহলে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওগণের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে অনেক বড় সাফল্য দেখাতে পারব। আমরা প্রতিবছর পরিমিত বাজেট পেলে সাফল্যের হার অনেক বেড়ে যাবে।'