দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁদিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন

আবার তীরে এসে তরী ডোবালো দক্ষিণ আফ্রিকা। শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেও পারলো না। আরও একবার ব্যর্থতায় নীল হতে হলো তাদের। ব্রিজটাউনে তাদের হতাশায় ডুবিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে নিলো ভারত। ইতিহাস তৈরি করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। শনিবার (২৯ জুন) ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে তারা দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ রানে হারিয়েছে। ভারতের করা ৭ উইকেটে ১৭৬ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে ১৬৯ রান করে।

ফাইনাল ম্যাচ ফাইনালের মতোই হয়েছে। শেষ ওভারেও ছিল টানটান উত্তেজনা। হেনরিখ ক্লাসেনের বিধ্বংসী ব্যাটিং ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তীরে এসে তরী ডোবার কাজটা হয় ক্লাসেনের আউটে। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে তার আউট দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। হৃদিক পান্ডের বলে এই আউটের ফলে ভারত ম্যাচে ফেরার পথ পেয়ে যায়।

 শেষ ৩০ বলে ম্যাচ জিততে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন দাড়ায় ৩০ রানের। হাতে অক্ষত তখন ৬ উইকেট। এমন সহজ সমীকরণের ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেল ৭ রানে। বুমরাহ, আর্শ্বদীপ তাদের শেষ স্পেলে যাদুকরি বোলিং করেন। 

১৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেই ১২ রানে দুই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তখনই দক্ষিণ আফ্রিকার সামনের পথটা অমসৃণ হয়ে পড়ে। তবে হাল ছাড়েননি কুইন্টন ডি কক। ট্রিস্টান স্টাবসকে নিয়ে বিপদ সংকুল পথে সামনে এগুতে থাকেন। ৫৮ রান যোগ করেন তারা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ফেরে ক্লাসেনের ব্যাটিংয়ে। ঝড়ো ব্যাটিং করে মাত্র ২৭ বলে ৫২ রান করেন তিনি।

ক্লাসেনের বিদায়ের পর ২৪ বলে ২৬ দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬ থেকে ১৯ এই চার ওভারে মাত্র ১৪ রান নিতে পারে। ম্যাচ মুলত সেখানেই জিতে নেয় ভারত। 

জসপ্রিত বুমরা অসাধারণ বোলিং করেছেন। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ক্রিজে আটকে রাখার কাজটা ভালোভাবেই করেছেন। ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন তিনি। দুই স্পেলে তার দুই উইকেট এবং রান খরচা না করার বিস্ময়কর বোলিং ফাইনালে ভারতকে ট্রফি এনে দিলো।হারদিক পান্ডিয়া ছিলেন ম্যাচে ভারতের সবচেয়ে সফল বোলার। ৩ ওভারে ২০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

টস জয়ের পর ব্যাট হাতে নামা ভারতের শুরুটা ছিল খুবই ভয়ঙ্কর। স্কোরবোর্ডে ৩৪ রান উঠতে বিদায় নিয়েছিলেন তিন ব্যাটার। যাদের মধ্যে অধিনায়ক রোহিত শর্মাও ছিলেন। অথচ এই বিশ্বকাপে সুপার এইট পর্ব থেকে আলো ছড়িয়ে চলেছিলেন তিনি। দুর্দান্ত সব ইনিংসে খেলেছেন। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচে ব্যর্থতার তালিকায় নাম লেখান তিনি। ৫ বলে ৯ রান করেন এই ওপেনার।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা শুরুতে উইকেট শিকারের যে উৎসব করেছেন তার শুরুটা এই রোহিত শর্মাকে দিয়ে। কেশব মহারাজের বলে হেনরিখ ক্লাসেনের হতে ধরা পড়েন তিনি। দলীয় রান তখন ২৩। একই রানে ফিরে যান নতুন ব্যাটার ঋষভ পন্ত। দুই বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।  একই ওভারের শেষ বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়েন।

জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলানোর আগেই নতুন ব্যাটার সূর্যকুমার যাদবও আউট হয়ে যান। সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে আগের ইনিংসগুলোতে ব্যর্থ বিরাট কোহলি বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যান। সঙ্গী হিসেবে পান অক্ষর প্যাটেলকে। চতুর্থ উইকেটে তারা ৭২ রানের জুটি গড়েন। ওভার প্রতি ৮ রান করে ৯ ওভারে তারা এই রান করেন।

অবশেষে রান আউটে কোহিল-প্যাটেল জুটি বিচ্ছিন্ন হয়। দুইজনের ভুল বোঝাবুঝিতে প্যাটেল রান আউট হন। ৩১ বলে ৪৭ রান করেন তিনি। এক বাউন্ডারির পাশাপাশি চার ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। আর বিরাট কোহলি ৫৯ বলে ৭৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেছেন। দুটো ওভার বাউন্ডারি আর আধাডজন বাউন্ডারি ছিল তার ইনিংসে। শিভাম দুবের সঙ্গে জুটি বেঁধে পঞ্চম উইকেটে তারা দলকে ৫৭ রান এনে দেন। দুবে ১৬ বলে ২৭ রানে করেন। পুরো বিশ্বকাপে প্রায় ফ্লপ হয়ে থাকা বিরাট কোহলি ফাইনালে সত্যিকার অর্থেই ব্যাট হাতে ‘বিরাট’ কিছুই করে দেখালেন। তার ৭৬ রানের এই ইনিংস তাকে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার এনে দিল। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১৭৬/৭ (২০ ওভারে, কোহলি ৭৬, অক্ষর ৪৭, দুবে ২৭, কেশব ২/২৩, নরকিয়া ২/২৬)। দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৬৯/৮ (২০ ওভারে, ডি কক ৩৯, ত্রিস্তাব ৩১, ক্লাসেন ৫২, মিলার ২১, আশ্বদীপ ২/২০, বুমরাহ ২/১৮, হৃাদিক ৩/২০)। ফল: ভারত ৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: বিরাট কোহলি। সিরিজসেরা: জাসপ্রিত বুমরাহ।