মিরপুরের আকাশে তখনও শোকের ছায়া। উত্তরার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সারা দেশ নিস্তব্ধ। এমন এক বিষাদময় দিনে ক্রিকেট মাঠে ইতিহাস লিখলো বাংলাদেশ দল। আজ রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ের পর পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করলো টাইগাররা- টি-টোয়েন্টিতে যা প্রথমবারের মতো।
মাত্র ১৩৩ রানের লড়াকু পুঁজি নিয়েও ম্যাচটা যেন অনায়াসেই জিতে নিচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, সেটা আবারও প্রমাণ করলো শেষদিকে পাকিস্তানের প্রত্যাবর্তন।
শেষ ওভারে দরকার ১৩ রান, হাতে মাত্র ১ উইকেট। আহমেদ দানিয়ালের প্রথম বলেই চার- মুহূর্তেই স্তব্ধ গ্যালারি। সমীকরণ দাঁড়াল ৫ বলে ৯। কিন্তু পরের বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে শামীম হোসেনের হাতে ধরা পড়েন দানিয়াল। উল্লাসে ফেটে পড়ে লাল-সবুজ শিবির, ইতিহাসের গর্ব বুক চিরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো মাঠে।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা ছিল তিক্ত। মাত্র ২৮ রানেই নেই ৪ উইকেট। ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝেই মাথা ঠান্ডা রেখে দলের হাল ধরেন জাকের আলি অনিক ও শেখ মেহেদী হাসান।
জাকের খেলেন ৪৮ বলে ৫৫ রানের অনবদ্য ইনিংস, মারেন ৫টি ছক্কা। মেহেদী করেন ২৫ বলে ৩৩। বাকিরা কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। তবু এই দুজনের ইনিংসেই গড়া হয় এমন এক সংগ্রহ, যা হয়ে ওঠে ম্যাচজয়ের ভিত।
১৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে পাকিস্তানের টপ অর্ডার ধসে পড়ে শুরুতেই। ১৫ রানের মধ্যেই তারা হারায় ৫ উইকেট। এরপর এক পর্যায়ে দলীয় ৫০ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারতে বসে তারা। কিন্তু ফাহিম আশরাফের ব্যাটে শুরু হয় প্রত্যাবর্তনের আশা।
৩২ বলে ৫১ রান করেন ফাহিম, তুলে নেন ম্যাচের উত্তেজনা। রিশাদ হোসেনের এক ওভারে আসে ১৫ রান। তবে ওই ওভারেই ফাহিম বোল্ড হন। শেষ ওভারে দানিয়ালকে দিয়ে চেষ্টা চালালেও মুস্তাফিজ থামিয়ে দেন শেষ আশাটুকু।
ম্যাচের আগে পুরো স্টেডিয়াম শোক প্রকাশ করে। খেলোয়াড়েরা কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামেন, এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সেই আবহেই মাঠে নামে লড়াকু এক বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৩/১০ (জাকের ৫৫, মেহেদী ৩৩, পারভেজ ১৩; মির্জা ২/১৭, দানিয়াল ২/২৩, আব্বাস ২/৩৭)।
পাকিস্তান: ১৯.২ ওভারে ১২৫/১০ (ফাহিম ৫১, আব্বাস ১৯, দানিয়াল ১৭, খুশদিল ১৩; শরীফুল ৩/১৭, তানজিম ২/২৩, মেহেদী ২/২৫, মুস্তাফিজ ১/১৫, রিশাদ ১/৪২)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩–ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২–০–তে এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জাকের আলী অনিক।