পশু-পাখি বিদেশ ভ্রমণে কি পাসপোর্ট লাগে

মানুষের মতো পশু-পাখিদের নিজস্ব কোনো 'পাসপোর্ট' না থাকলেও, এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের বেশ কিছু আইনি নথি এবং অনুমতির প্রয়োজন হয়। একে সহজ ভাষায় পশুদের জন্য 'ভ্রমণ নথি' বা 'পেট পাসপোর্ট' বলা যেতে পারে।

এই প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো-

১. পেট পাসপোর্ট (Pet Passport)
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এবং আরও কিছু উন্নত দেশে 'পেট পাসপোর্ট' ব্যবস্থা চালু আছে। এটি দেখতে মানুষের পাসপোর্টের মতোই একটি ছোট বই, যেখানে ওই পশুটির (বিশেষ করে কুকুর বা বিড়াল) ছবি, জাত, লিঙ্গ এবং মালিকের তথ্য থাকে। তবে এর সবচেয়ে বড় কাজ হলো ওই পশুটির স্বাস্থ্য এবং টিকাদানের ইতিহাস রেকর্ড রাখা।

২. কেন এই নথি প্রয়োজন?
পশুদের পাসপোর্ট বা নথির প্রধান উদ্দেশ্য হলো রোগ বিস্তার রোধ করা। বিশেষ করে র‍্যাবিসের (জলাতঙ্ক) মতো মারাত্মক রোগ যেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে না ছড়ায়, তাই আন্তর্জাতিক ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

৩. ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি
পশুদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিতে হলে সাধারণত নিচের ধাপগুলো পার করতে হয়-

মাইক্রোচিপিং: পশুটির শরীরের চামড়ার নিচে একটি ছোট মাইক্রোচিপ বসানো হয়, যা স্ক্যান করলে তার পরিচয় পাওয়া যায়। এটিই মূলত তাদের ডিজিটাল পরিচয়পত্র।

টিকাদানের সনদ: পশুটি জলাতঙ্কসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের টিকা নিয়েছে কি না, তার সরকারি সার্টিফিকেট লাগে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Health Certificate): ভ্রমণের অন্তত ১০ দিন আগে একজন নিবন্ধিত পশুচিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত করতে হয় যে পশুটি ভ্রমণের জন্য সুস্থ।

নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC): অনেক দেশে প্রবেশের আগে ওই দেশের সরকারের কাছ থেকে একটি আমদানির অনুমতিপত্র বা এনওসি নিতে হয়।

৪. বন্যপ্রাণী ও পাখির ক্ষেত্রে নিয়ম
পোষা প্রাণী ছাড়া বন্যপ্রাণী বা বিরল প্রজাতির পাখি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নিয়ম আরও অনেক কঠিন। এক্ষেত্রে সাইটিস (CITES) নামের আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমতি লাগে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রাণীটি পাচার হচ্ছে না।

৫. যাযাবর পাখিদের কি পাসপোর্ট লাগে?
প্রাকৃতিকভাবে উড়ে যাওয়া যাযাবর পাখিদের কোনো পাসপোর্ট বা ভিসা লাগে না। তারা স্বাধীনভাবে সীমানা অতিক্রম করতে পারে। তবে মানুষের মাধ্যমে বা বিমানে করে কোনো পাখিকে অন্য দেশে নিতে হলে অবশ্যই ওপরের আইনি প্রক্রিয়াগুলো মানতে হয়।