কোন পরিবারে আপনি জন্ম নেবেন বা কাকে আপনি বাবা-মা হিসেবে ডাকবেন, তা বেছে নেওয়ার অধিকার আপনার থাকে না। কিন্তু বন্ধু হিসেবে কোন মানুষটাকে আপনি আপনার জীবনে বেছে নেবেন, সেই অধিকার থাকে আপনার। রক্তের সম্পর্ক না হয়েও যে সম্পর্ক সব থেকে কাছের হয়ে যায়, সেটাই হলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আর এই বন্ধুর মধ্যে যে হয়ে যায় সব থেকে প্রিয়, তাকেই বলা হয় প্রিয় বন্ধু।
বিশ্বাস, ভরসা, শ্রদ্ধা, সততা, সুখ-দুঃখ, হাসি-উল্লাস- এমন সব শব্দকে একটি একক শব্দেই প্রকাশ করা যেতে পারে, তা হলো—বন্ধুত্ব।
ইংরেজ সাহিত্যিক স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ বন্ধুত্বকে বলেছেন, শেল্টারিং ট্রি বা আশ্রয়দাতা বৃক্ষ। অবশ্য সব বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এসব বক্তব্য খাটে না। গোটা জীবনজুড়ে হাজার হাজার বন্ধু হয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থেকে যায় কজন! সত্যিকারের বন্ধু, প্রিয় বন্ধু, পরম বন্ধু, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হয় হাতে গোনা।
বন্ধু, যাকে বলা যায় নিজের জীবনের প্রত্যেকটি অনুভূতির কথা। খারাপ হোক বা ভালো, সমস্ত মুহূর্তের কথা শেয়ার করা যায় তার সঙ্গে। জীবনে চলার পথে যদি একটি ভালো বন্ধু পাওয়া যায় তাহলেই জীবনের চলার পথ হয়ে যায় খুবই মসৃণ। তাই এই বিশ্ব প্রিয় বন্ধু দিবস উপলক্ষে আপনি আপনার বন্ধুকে জানান তার প্রতি আপনার ভালোবাসার কথা।
গবেষণা বলছে, প্রতি ১২ জনে একজন হয় আজীবনের, হয় পরম বন্ধু। আবার একই সময়ে মানুষের দুইয়ের অধিক ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ থাকে না। ঠিক যেন প্রেমের মতোই ব্যাপার। একসঙ্গে যেমন একাধিক প্রেম চলে না, তেমনই দুইয়ের অধিক ঘনিষ্ঠ বন্ধুও হয় না।
বন্ধুত্বের কথা বলতে গিয়ে চলে এল প্রেম। খাঁটি বন্ধুত্বের বিচারে প্রেম নেহাত মামুলি সম্পর্ক, প্রেমের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সত্যিই তো, প্রথাগত প্রেম, মায়া, স্নেহ, মোহ—এসব অনুভূতির চেয়ে সহস্র গুণ শক্তিশালী অনুভূতির নাম বন্ধুত্ব। প্রেম ফুরিয়ে যায়। চূড়ান্ত ধ্বংসস্তূপে ঠেলে দেয় কখনো। বন্ধুত্ব ফুরায় না। ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে আনে। বিপদে বুক পেতে দেয়। দুর্গম পথে হাত ধরে রাখে শক্ত করে। ডুবে যাওয়ার মুখে আগলে ধরে রাখে। একজন সত্যিকারের বন্ধু মানে সেই স্বচ্ছতম আয়না, যার সামনে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়েও নিজের ভেতরটাকে দেখা যায়। তুমুল হাহাকারে জড়িয়ে ধরে চোখের জলে ভাসিয়ে দেওয়া যায় বন্ধুর বিশ্বস্ত কাঁধ।
আজ ৮ জুন, বেস্ট ফ্রেন্ড ডে বা ঘনিষ্ঠ বন্ধু দিবস। ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দিনটি চালু করে। এর পর থেকে সে দেশে প্রতিবছর এটি পালিত হচ্ছে।