যেসব দেশের জাতীয় সঙ্গীতে সুর আছে, কথা নেই

সঙ্গীত বলতে আমরা সাধারণত কথা, সুর ও তালের সমন্বয়ে সৃষ্ট এক প্রকারের সুসংবদ্ধ শব্দমালাকে বুঝি। ফলস্বরূপ, কোনো সঙ্গীতে কথা নেই এমনটা শুনলে অবাক হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। তবে হ্যাঁ, কথা ছাড়াও সঙ্গীত রয়েছে। এমনকি এই কথা ছাড়া সঙ্গীতগুলো কোনো সাধারণ সঙ্গীত নয়, পৃথিবীর চারটি পরিচিত দেশের জাতীয় সঙ্গীতেই কোনো কথা নেই। রয়েছে শুধু সুর। আর সেসব সুর তৈরি করা হয়েছে দেশীয় সব বাদ্যযন্ত্র দিয়ে। দেশগুলো হল স্পেন, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, সান মারিনো এবং কসোভো। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই চারটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের ব্যাপারে বেশ কিছু অজানা তথ্য।

স্পেন
স্পেনের জাতীয় সংগীত ‘মার্সা রিয়েল’ নামে পরিচিত। অনুমান করা হয় বর্তমান জার্মানির অন্তর্গত প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক এই সঙ্গীত তৈরি করেন। ১৮৬১ সালে সঙ্গীতটি সর্বপ্রথম পুরুশিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পর ১৮৬৪ সালের দিকে প্রাশিয়ায় বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সে সময় স্পেনের রাজা তৃতীয় চার্লস, দ্বিতীয় ফ্রেডেরিকের সেনাবাহিনীর দ্বারা উন্নত সামরিক কৌশল শিখতে একবার জুয়ান মার্টিন নামে এক ব্যক্তিকে পাঠান। এরপর জুয়ানকে ফেরত পাঠানোর সময় পুরস্কার হিসেবে ফ্রেডেরিক চার্লস কে মার্সা রিয়েলের সুরকৌশল লিখে দেন। এরপর ১৯০৮ সালে স্পেনে প্রকাশিত এনসাইক্লোপেডিয়া এস্পানাতে সংযুক্ত করা হয় এই সঙ্গীত। মূলত সেখান থেকেই রাণী দ্বিতীয় ইসাবেলা সঙ্গীতটিকে প্রথমবারের মতো স্পেনের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করেন।

বসনিয়া-হার্জেগোভিনা
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত এই দেশের জাতীয় সঙ্গীতেও নির্দিষ্ট কোন লিরিক্স নেই। তবে স্থানীয়ভাবে এই দেশে বেশকিছু কথা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে যে জাতীয় সঙ্গীতটি প্রচারিত হয় সেটিতে কোনো ধরনের কথা নেই। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে কথাহীন এই সঙ্গীতটি বসনিয়ার পূর্বের জাতীয় সঙ্গীত ‘জেদনা সি জেদিনা’র স্থলাভিষিক্ত হয়। বসনিয়া- হার্জেগোভিনা দেশটি বসনিয়া নামেই বহুল প্রচলিত।

সান মারিনো
স্থানীয় ভাষায় সান মারিনোর জাতীয় সঙ্গীতকে ডাকা হয় ‘ইন্নো নোজিওনালে’ নামে। বিখ্যাত ইতালিয়ান বেহালাবাদক ফেদেরিকো কনসোলো একটি সঙ্গীত রচনা করেন। ১৮৯৪ সালে ফেদেরিকো কনসোলো রচিত এই সঙ্গীতটি সান মারিনোর জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে প্রচলিত হয়। এই সঙ্গীতের কোনো অফিশিয়াল লিরিক্স না থাকলেও স্থানীয়ভাবে এর বেশকিছু কথা প্রচলিত রয়েছে।

কসোভো
এই দেশের জাতীয় সঙ্গীতে কোনো লিরিক্স না থাকায় প্রথম থেকেই একটু বেশি আলোচিত ছিল কসোভা। তবে ২০০৮ সালের জুন মাসে কসোভোর বিখ্যাত শহর প্রিস্টিনায় এর লিরিক্সের জন্য খোলা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কসোভোর জাতীয় পরিষদ। আর সেখান থেকে পাওয়া লিরিক্স বর্তমানে কসোভোর জাতীয় সঙ্গীতের লিরিক্স হিসেবে স্থানীয়ভাবে ব্যবহার করা হয়। কসোভোর জাতীয় সঙ্গীত ইউরোপে ‘হিমনি আই রিপাব্লিকাস সি কসোভোস’ নামে বেশ পরিচিত।