মিসর নয় এবার ইন্দোনেসিয়া

মাটির নিচে ২৫ হাজার বছরের পিরামিড

পিরামিডের প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমেই যে দেশটির কথা মাথায় আসে তা হলো মিসর। মাটির গভীরে লুকিয়ে থাকা রহস্যের অপার খনি হিসেবে পরিচিত এই স্থাপত্য। তবে বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো পিরামিড নাকি মিশরে নয়, বরং ইন্দোনেশিয়ায়! দেশটির মাটির নিচে ২৫ হাজার বছরের প্রাচীন এক পিরামিডের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা মিশরের পিরামিডগুলোর তুলনায় অনেক পুরোনো বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।

ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।

তথ্য মতে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ভূতত্ত্ববিদদের একটি বিশেষ গবেষক দল ইন্দোনেশিয়ার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অভিযান চালায়। দীর্ঘ গবেষণা শেষে তারা জানান, সেখানে পাওয়া স্থাপত্যটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো মেগালিথিক (একাধিক বিশালাকারের পাথর দিয়ে তৈরি) স্থাপনা হতে পারে।

মিসর বিশেষজ্ঞদের মতে, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দুই হাজার ৭০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত গিজা পিরামিড। এর কাছাকাছি সময়েই তৈরি হয় জোসেরের পিরামিড। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় সবুজ দিয়ে মোড়া এক পাহাড়ি অঞ্চল। এর মাঝে ইতিউতি পড়ে থাকতে দেখা যায় ছোটবড় অসংখ্য রহস্যময় পাথর এই অঞ্চলে মূলত প্রাচীন জনজাতিদের বসবাস। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি একটি অতি পবিত্র স্থান। কিন্তু এর আসল রহস্য বহু দিন অজানাই থেকে গিয়েছিল। একে একটি পাহাড় বলেই জানতেন সে দেশের মানুষ। মিসর নয় ইন্দোনেসিয়া

ছবি: সংগৃহীত 

বিশেষজ্ঞরা প্রথমে জানিয়েছেন, মিসরের পিরামিড, এমনকি স্টোনহেঞ্জের থেকেও পুরনো এই পিরামিড সম্ভবত মানুষের তৈরি সবচেয়ে প্রাচীন মেগালিথিক (একাধিক বিশালাকারের পাথর দিয়ে তৈরি) স্থাপত্য। অবশ্য সম্প্রতি সেই ধারণা নিয়ে ভিন্ন মতপোষণ করতে শুরু করেছেন গবেষকদের একাংশ।

দীর্ঘ গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্দোনেশিয়ার ‘ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সি’। ইন্দোনেশিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেসের ড্যানি হিলম্যান নাতাভিদজাজা এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং গবেষণাপত্রটি ‘আর্কিয়োলজিক্যাল প্রসপেক্টশন’ নামক একটি প্রবন্ধের আকারে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

ড্যানি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছিলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পরে জানা গিয়েছে আগ্নেয় পাথরের তৈরি পাহাড়ের গা কেটে এই স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল। 

রেডিয়োকার্বন ডেটিংয়ের প্রতিবেদনে বলেছে, তুষার যুগের শেষে তৈরি হয়েছিল এই স্থাপত্য। পিরামিডের মূল অংশটি বিশাল অ্যান্ডেসাইট লাভা দিয়ে তৈরি। পিরামিডের প্রাচীনতম নির্মাণ উপাদানটি সম্ভবত একটি প্রাকৃতিক লাভা পাহাড়। তারপর সেটি কেটে কেটে ভাস্কর্য তৈরি করা হয় এবং তা স্থাপত্যের রূপ দেয়া হয়।

ড্যানি জানান, গুনুং পাডাংয়ের গঠন বেশ জটিল এবং একই সঙ্গে অভিজাত। এর সবচেয়ে গভীর অংশ মাটির থেকে ৩০ মিটার নিচে। তার দাবি, পিরামিডের কেন্দ্রস্থলটি খ্রিস্টপূর্ব ২৫ হাজার থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৪ হাজার বছরের মধ্যে তৈরি। কিন্তু তার পর দীর্ঘদিন সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৭৯০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬১০০ বছরের মধ্যে এর কাজ চলে। চূড়ান্ত নির্মাণকাজ চলে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ বছরের মধ্যে। পিরামিডের উপরের অংশ বর্তমানে কিছুটা দৃশ্যমান। পিরামিডের পরিকল্পনাও অত্যন্ত জটিল ধরনের। এর সবচেয়ে গভীর অংশটি মাটির প্রায় ৩০ ফুট নিচে রয়েছে। এছাড়া এর ভেতরে রয়েছে বিরাট আকৃতির বেশ কয়েকটি গুপ্ত কক্ষ, যার সব ক'টির রহস্য সমাধান করা সম্ভব হয়নি। 

ছবি: সংগৃহীত

একটি নতুন গবেষণাপত্রে গবেষকদের একটি চমকপ্রদ দাবি উঠে এসেছে। 

তারা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ার গুনুং পাভাং পিরামিড খ্রিস্টের জন্মের আনুমানিক ১৬ হাজার থেকে ২৭ হাজার বছর আগে নির্মিত হয়েছিল ঠিকই, তবে এই নির্মাণটি আদৌ মানুষের তৈরি কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা। 

সাদার্ন কানেকটিকাট স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক বিল ফারলি বলেছেন যে, গুনুং পাডাং থেকে প্রাপ্ত ২৭ হাজার বছরের পুরনো মাটির নমুনা থেকে কাঠকয়লা বা হাড়ের টুকরোর মতো কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। এই ধরনের উপাদান সেখানে মানুষের কার্যকলাপের অস্তিত্ব প্রমাণে সহায়তা করত বলে জানান তিনি। 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জটিল এই স্থাপত্যটি বৈচিত্রে ভরা। গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, গুনুং পাডাং বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার বিভিন্ন গোষ্ঠীর দখলে এসেছে। তাদের প্রভাবে এর স্থাপত্যও আকারে পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এই পিরামিডের প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাস।