ধ্বংসের দিন নিকটে?

সমুদ্রের তলদেশ থেকে উঠে এল অদ্ভুত প্রাণী! 

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সামুদ্রিক জীবজন্তুর অস্বাভাবিক আচরণ কখনো কখনো প্রকৃতির ভয়াবহ পরিবর্তনের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়। মাসখানেক আগে অদ্ভুতদর্শন এমনই এক মাছের দেখা মিলেছিল স্পেনীয় দ্বীপ টেনেরিফের কাছে। নাম হাম্পব্যাক অ্যাংলারফিশ। এরা বেশি পরিচিত 'ব্ল‍্যাক সি ডেভিল' নামে। ভয়ঙ্করদর্শন মাছটির রং কুচকুচে কালো। চোয়ালে অজস্র ধারালো দাঁত, মাথার ওপর শুঁড়, ঘোলাটে চোখ। বদখত দেখতে মাছটির বাস সমুদ্রের অতলে সূর্যের রশ্মি পৌঁছায় না এমন জায়গায়। তবে তাদের সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসার ইতিহাস তেমন একটি নেই।

পৃথিবীর ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার মাছটি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে মাছটির একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেসময়ও মাছটির ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। তবে শুধু অ্যাংলারফিশ নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্রের অন্ধকার থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসতে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েকটি অদ্ভুতদর্শন প্রাণীকে। সচরাচর এসব প্রাণীর দেখা সমুদ্রপৃষ্ঠে মেলে না। কিন্তু কেন ঘটছে এমনটা? তা নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়েছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। 

গত ১০ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রসৈকতে ভেসে ওঠে মাছটি। অ্যাংলারফিশের মতো অরফিশ অতটা খারাপ দেখতে নয়। রুপালি রঙের ছিপছিপে মাছটি দেখতে ধাতব চাবুকের মতো। পাখনার রং কমলা। অরফিশও গভীর জলের মাছ। সে-ও সমুদ্রের 'মেসোপেলাজিক' অঞ্চলে বাস করে। ফলে খুব কমই সমুদ্রেপৃষ্ঠের কাছাকাছি দেখা যায় অরফিশকে। 

ছবি: সংগৃহীত

তবে আকস্মিকভাবে মাছটি সমুদ্রের উপরে উঠে আসায় আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই ঘটনা উস্কে দিয়েছে কিছু ভয়ঙ্কর পৌরাণিক কাহিনীকেও। ফলে মাছটিকে আপাতত 'ডুমসডে ফিশ' নামেই ডাকছেন অনেকে। কিন্তু কেন? জাপানের লোককথায় অরফিশ পরিচিত 'রিউগু নো সুকাই' বা 'সমুদ্র ঈশ্বরের বার্তাবাহক' নামে। খারাপ বা বিধ্বংসী কিছু হতে চললে তবেই নাকি উপরে উঠে আসে মাছটি। ধ্বংসের বার্তা দিয়ে যায়। আর সে কারণেই ওই মাছটিকে 'ধ্বংসের দিনের মাছ' বলে উল্লেখ করছেন অনেকে। 

২০১১ সালে জাপানের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরে গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী প্রায় ২০টি অরফিশ দেশটির উপকূলে ভেসে ওঠে। এরপর ২০১৩ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্রসৈকতে প্রায় সাড়ে পাঁচ মিটার লম্বা একটি অরফিশ ভেসে উঠেছিল। বিজ্ঞানীদের অবাকও করে দিয়েছিল মাছটি। ২০১৭ সালে ফিলিপিন্সেও দেখা গিয়েছিল মাছটিকে। 

বিজ্ঞানীদের দাবি, ভূমিকম্পের কারণে চাপের পরিবর্তন হলে সমুদ্রের গভীরে থাকা প্রাণীদের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এবং তারা সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে। আবার ভূমিকম্পের আগে প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস নিঃসৃত হওয়ার কারণেও সমুদ্রের অতলে থাকা অনেক মাছ উপরে উঠে আসে।