২০ বছর ধরে ঘুমে সৌদির রাজপুত্র

রূপকথার সোনার কাঠি রুপার কাঠির গল্পের মতোই বাস্তব গল্প। তবে অনেক কঠিন ও নির্মম। রূপকথার গল্পে রাজকুমারীকে যেমন রুপার কাঠি ছুঁইয়ে হাজার বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো। বাস্তবের টানা ২০ বছর ধরে ঘুমের রাজ্যে রয়েছেন দুর্ঘটনায় আহত সৌদির যুবরাজ আল-ওয়ালিদ বিন খালেদ। 

১৬ বছর বয়সে ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় কোমায় চলে যান আল-ওয়ালিদ। ২০০৫ সালে রিয়াদে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এরপর যুবরাজ কোমায় চলে যান। সেসময় লন্ডনের একটি সামরিক কলেজে পড়তেন তিনি। তাকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, মস্তিষ্কে চোট লাগার কারণে তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন

যুবরাজ ওয়ালিদ, সৌদি রাজ পরিবারের সদস্য খালিদ বিন তালাল আল সৌদের ছেলে ও সৌদি ধনকুবের ব্যবসায়ী আল-ওয়ালিদ বিন তালালের ভাইপো। 

প্রিন্স আল-ওয়ালিদ সৌদি রাজ পরিবারের সদস্য হলেও বর্তমান বাদশার সঙ্গে সরাসরি উত্তরাধিকারী নন তিনি। আল-ওয়ালিদের দাদু, তালাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ ছিলেন অধুনা সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা আবদুল আজিজ আল সৌদের ছেলে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে আল-ওয়ালিদ সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতার নাতির ছেলে।

দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ভেন্টিলেটর ও ফিডিং টিউবের ওপরই নির্ভরশীল ওয়ালিদ। বছরের পর বছর ধরে তার অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালে সীমিত সাড়া দেয়ার কিছু লক্ষণ দেখা গিয়েছিল রাজপুত্রের মধ্যে। তার মাথা ও আঙুলগুলো সামান্য নড়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে আর সুস্থতা কোনো লক্ষণ দেখা দেয়নি।  রিয়াদের একটি হাসপাতালে ১১ বছর শুশ্রূষার পর ২০১৬ সালে ওয়ালিদকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তিনি নিজের বাড়িতেই লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।

ওয়ালিদকে দেখাশুনা জন্য জন দশেক কর্মচারী রাখা হয়েছে সৌদি রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে। এর জন্য খরচ হয় কোটি কোটি টাকা। গেল ১৮ এপ্রিল সৌদি রাজ পরিবারের সদস্যরা জন্মদিন উদযাপন করে সামাজিক মাধ্যমে ওয়ালিদের ছোটবেলার বেশ কিছু ছবি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছিলেন।

তারা সামাজিক মাধ্যমে রাজপুত্রের সুস্থতা কামনা করে লিখেছিলেন, এতগুলো বছর ধরে তাদের হৃদয়জুড়ে রয়েছেন ওয়ালিদ। ঈশ্বরের কৃপায় তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন, প্রার্থনা করেছেন পরিবারের আত্মীয়রা। হাজার হাজার মানুষ তার আরোগ্য কামনা করেছেন। তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই ধারণা পোষণ করে চলেছেন যুবরাজের বাবাও। 

তিনিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, কোমা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরবেন তার আদরের সন্তান। খালিদ মনে করেন, একদিন ঠিক 'অলৌকিক' কোনো ঘটনা ঘটবে এবং তার ছেলে কোমা থেকে বেরিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন। খালিদ একবার বলেছিলেন, 'চিকিৎসকরা আমার ছেলের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ছেলের কবর দিতাম। কিন্তু আমার ছেলে যতক্ষণ নিঃশ্বাস নেবে ততক্ষণ আমি চিকিৎসা চালিয়ে যাব।' শুধু খালিদ নন, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি থাকা সৌদি রাজ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই ওয়ালিদের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করতে রাজি নন।

বিগত বছরগুলোয় যুবরাজের চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছিলেন আমেরিকা ও স্পেনের খ্যাতনামী চিকিৎসকরা। কিন্তু সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনো তার জ্ঞান ফেরানো যায়নি।