দক্ষিণ আফ্রিকার কওয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের বাবানাঙ্গো একসময় ছিল প্রাণীশূন্য, ফেলে রাখা ভূমি। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সেখানকার পাহাড়, তৃণভূমি ও নদীপাড় জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে সিংহ, হাতি, গণ্ডার, মহিষ ও চিতা—যাদের একসাথে বলা হয় 'বিগ ফাইভ'। এ কৃতিত্ব এক বিশাল রিওয়াইল্ডিং (প্রাণীকুল পুনঃস্থাপন) প্রকল্পের, যা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জুলু সম্প্রদায়ের অংশীদারিত্বে আন্তর্জাতিক সংরক্ষণবিদ ও বিনিয়োগকারীরা।
১৮৭৯ সালের অ্যাংলো-জুলু যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তা চাষের জমিতে রূপান্তর করে। সিংহসহ বহু প্রাণী স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্ণবৈষম্যের অবসান-পরবর্তী ভূমি সংস্কারে ভূমি ফেরত পায় জুলু সম্প্রদায়। কিন্তু কয়েক দশকের গবাদিপশু চারণ ও অবৈধ শিকার প্রাণীবিহীন করে তোলে এলাকাটিকে।
২০১৮ সালে শুরু হয় বাবানাঙ্গো গেম রিজার্ভের যাত্রা। প্রকল্পে নেতৃত্ব দেয় তিনটি জুলু সম্প্রদায় ট্রাস্ট, স্থানীয় এনজিও এবং জার্মান দানশীল দম্পতি বারবারা ও হেলমুথ ভাইসার, যারা প্রায় এক বিলিয়ন র্যান্ড (৪২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) বিনিয়োগ করেন। প্রকল্পের আওতায় ২০,০০০ হেক্টর জমিতে শুরু হয় প্রাণী পুনঃপ্রবর্তন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ।
প্রকল্পের প্রথম দিকে ২,৬০০ গরু, ৩০০ ছাগল ও ৩৫ গাধা অপসারণে সময় লেগে যায় তিন বছর। ২০২২ সালে সম্পূর্ণ ঘেরাওবেষ্টনী (৮১ কিমি) নির্মিত হওয়ার পর শুরু হয় বন্য প্রাণীর আগমন।
প্রাণীগুলো প্রথমে কয়েক মাসের জন্য বিশেষ বোমায় (ঘেরা এলাকা) রাখা হয়, স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ছাড়া হয় মুক্ত বনে।
বাবানাঙ্গো গেম রিজার্ভের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভূমি ভাড়ায় নেয়া হয়েছে স্থানীয় কমিউনিটি ট্রাস্টগুলোর কাছ থেকে। বিনিময়ে তারা পায় নিয়মিত ভাড়া, পশুর আয়ের অংশীদারিত্ব এবং প্রকল্প মুনাফার ২৫ শতাংশ। রিজার্ভের ৭৫ শতাংশ কর্মীই স্থানীয় বাসিন্দা, যা অনেকের জীবনে প্রথম স্থায়ী চাকরির সুযোগ এনে দিয়েছে।
আফ্রিকান হ্যাবিটাট কনজারভ্যান্সি ফাউন্ডেশন, বাবানাঙ্গোর অংশীদার, ১০ কিমি ব্যাসার্ধের গ্রামগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। তাদের উদ্যোগুলো হলো-- ১৭টি সোলার-পাওয়ার্ড বোরহোল, যা সরবরাহ করছে সুপেয় পানি, কৃষি সহায়তা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ শিক্ষা, স্থানীয় শিল্পীদের (যেমন, জুলু পুঁতির কাজ, সিরামিক) প্রশিক্ষণ ও বাজার সৃষ্টি এবং আক্রমণাত্মক গাছ (যেমন, ব্ল্যাক ওয়াটল) অপসারণ, যা গ্রাউন্ডওয়াটার শোষণ করে।
সংরক্ষণবিদরা বলছেন, বাবানাঙ্গো হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি রোল মডেল—যেখানে স্থানীয় সম্প্রদায় মালিকানাধীন ভূমিতে সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক বিকাশ একসাথে সম্ভব। প্রকল্পটি প্রমাণ করছে, রিওয়াইল্ডিং শুধু পরিবেশ রক্ষার কাজ নয়, এটি দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নেরও এক হাতিয়ার।