পরিবেশ রক্ষায় অভিনব ও ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অটোচালক আব্দুল হাকিম। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে নির্মাণ করছেন এক দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই ‘বোতল বাড়ি’, যা এখন শুধু স্থানীয়দের নয়, আশেপাশের গ্রামের মানুষকেও বিস্মিত করছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পশ্চিম ছাপরহাটি খানপাড়ায় নির্মাণাধীন এই তিন কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহারের সফল মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ছাদের ঢালাই ছাড়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে নির্মাণকাজ।
স্থানীয়রা বাড়িটিকে ডেকেছেন ‘বোতল বাড়ি’ নামে, আর নির্মাতা আব্দুল হাকিম হয়ে উঠেছেন উদ্ভাবনের প্রতীক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইটের পরিবর্তে সারি সারি প্লাস্টিক বোতলে বালু ভরে তা সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা হচ্ছে দেয়াল নির্মাণে। এভাবে শুধু পরিবেশবান্ধব একটি ঘরই নয়, টেকসই ও ঝুঁকিমুক্ত নির্মাণের নতুন এক ধারা তৈরি করছেন হাকিম।
তিনি বলেন, ‘আমি ইউটিউবে বোতল দিয়ে ঘর নির্মাণের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হই। এরপর বিভিন্ন ভাঙারির দোকান ঘুরে পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহ করি। প্রতিদিন অটো চালিয়ে যা আয় করি, তার কিছু অংশ দিয়ে সিমেন্ট-বালু কিনে কাজ শুরু করি। শুরুতে অনেকে পাগল বললেও এখন সবাই আমার কাজ দেখে উৎসাহ দিচ্ছে।’
হাকিমের এই উদ্যোগে সবচেয়ে বড় সাহস জুগিয়েছেন তার স্ত্রী আনচুমারা বেগম।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে পরিবার ও সমাজের অনেকেই আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু আমি আমার স্বামীকে বলেছি, তুমি শুরু করো, আমি পাশে আছি। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তব হচ্ছে দেখে খুব ভালো লাগছে।’
এই নির্মাণকাজে যুক্ত হয়েছেন রাজমিস্ত্রি বাদশা মিয়া, যিনি নিজেই লালমনিরহাটে একটি বোতলের ঘর তৈরি করেছিলেন।
তার ভাষ্য, ইটের চেয়ে এই বাড়ি সাশ্রয়ী, তাপ সহনশীল এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধেও বেশি কার্যকর। প্লাস্টিকের বোতল না পুড়লে পরিবেশে কোনো ক্ষতি হয় না, বরং তা পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে কাজে লাগানো যায়।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমি এ ধরনের একটি নির্মাণের কথা শুনেছি। খুব শিগগির পরিদর্শন করে বুঝতে পারব এর টেকনিক্যাল দিকগুলো এবং পরিবেশগত প্রভাব। তবে এমন নির্মাণ যদি নিরাপদ ও কার্যকর হয়, তা হলে নিঃসন্দেহে তা অনুসরণযোগ্য উদাহরণ হতে পারে।’