শিল্পকলার চিরাচরিত তুলি আর ক্যানভাসের দিন কি ফুরিয়ে আসছে? তুর্কি-মার্কিন শিল্পী রেফিক আনাদোল অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিল্পমহলে তার পরিচিতি কোনো রক স্টারের চেয়ে কম নয়। কোডিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (AI) ব্যবহার করে তিনি তৈরি করছেন এমন সব বিস্ময়কর শিল্পকর্ম, যা আগে কখনও কল্পনা করা যায়নি।
২০২৫ সালের আগস্টে 'টাইম' ম্যাগাজিন বিশ্বের ১০০ জন এআই অগ্রগামীর তালিকায় রেফিক আনাদোলকে অন্তর্ভুক্ত করে। শুধু তাই নয়, ম্যাগাজিনটির ওই বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদটিও তিনি ডিজাইন করেন। টাইম-এর গত দশকের ৫,০০০টি প্রচ্ছদের তথ্য ব্যবহার করে এআই-এর মাধ্যমে তিনি এক অনন্য ডিজিটাল চিত্রকর্ম তৈরি করেন।
আনাদোল কেবল একজন শিল্পী নন, তাকে একজন 'ডেটা সায়েন্টিস্ট' বা তথ্য বিজ্ঞানীও বলা যায়। ২০২৩ সালে ইস্তাম্বুল মডার্ন-এ তার একটি প্রদর্শনীতে বসফরাস প্রণালীর স্রোতের গতিপথকে তথ্যের মাধ্যমে শিল্পকর্মে রূপান্তর করেন তিনি। আবার নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট-এ (MoMA) তার ‘আনসুপারভাইজড’ প্রদর্শনীটি প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পরিদর্শন করেছেন।
আনাদোলের সাম্প্রতিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো 'ফ্লোরা'। তুরস্কের ৩৩টি জাতীয় উদ্যানের বিলুপ্তপ্রায় ফুল ও জীববৈচিত্র্যের তথ্য ব্যবহার করে তিনি এই ডিজিটাল স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করেছেন। তার মতে, "এআই শুধু ভয় বা প্রচারের বিষয় নয়; এটি সংস্কৃতি, কল্পনা এবং আশার প্রতিফলন।"
আগামী ২০২৬ সালের বসন্তে লস অ্যাঞ্জেলেসে যাত্রা শুরু করবে 'ডাটাল্যান্ড' (Dataland)। এটি হবে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক জাদুঘর। ফ্রাঙ্ক গেহরির নকশা করা এই জাদুঘরটি হবে আনাদোলের স্বপ্নের প্রজেক্ট, যেখানে মানুষ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকৃতির নতুন রূপ দেখতে পাবে।
রেফিক আনাদোল একা নন, তার এই বিশাল কর্মযজ্ঞের পেছনে রয়েছে একটি নিবেদিত স্টুডিও টিম এবং তার স্ত্রী ও পার্টনার এফসুন এরকিলিক। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিল্পকলা এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে।