একবিংশ শতাব্দী ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ঘেরা এক বাস্তবতা। এখন মানুষের জীবন প্রায় পুরোপুরিই সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর। সেই ডিজিটাল দুনিয়াকে আরও জটিল ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence)।
বর্তমানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা এক্স খুললেই দেখা যায় এআই দিয়ে তৈরি অসংখ্য ছবি ও ভিডিও। কখনও মানুষ, কখনও প্রাণী, আবার কখনও প্রাকৃতিক দৃশ্য সবকিছু এত বাস্তব মনে হয় যে বোঝাই মুশকিল কোনটা আসল আর কোনটা কৃত্রিম।
এখনকার স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যেকেউ সহজেই তৈরি করতে পারেন ‘হাইপার রিয়েলিস্টিক’ বা অতিবাস্তব ছবি। অনেকে নিছক আনন্দ বা কৌতূহলবশত এসব ছবি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় তখনই, যখন সাধারণ মানুষ সেই ছবিকে বাস্তব বলে ধরে নেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনও তুলনামূলক নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় অনেকেই আসল ও এআই-নির্মিত ছবির পার্থক্য বুঝতে পারেন না। এর ফলে ভুল তথ্য, গুজব, বিভ্রান্তি এমনকি সামাজিক আতঙ্কও ছড়াতে পারে।
সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় ঘটেছে এমনই এক ঘটনা। এআই-নির্মিত বিভ্রান্তিকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, এক যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবিতে দাবি করেন ‘আজ হঠাৎই পুকুরপাড়ে একটি কুমির দেখা গেছে।’ ছবিটি ছিল সম্পূর্ণ কৃত্রিম, তবে দেখতে বাস্তবের মতো।
ছবি প্রকাশের পর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্য ও আতঙ্ক। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘লোকজন ভয়ে পুকুরপাড়ে যেতে চায়নি। পরে জানা যায়, ছবিটা আসল নয়, এআই দিয়ে বানানো।’
পরবর্তীতে ওই যুবক প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেও ঘটনাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই-নির্মিত ছবি বা ভিডিও পোস্ট করার আগে অবশ্যই তার সত্যতা যাচাই করা উচিত। ভুল বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ালে আইনি জটিলতা ও সামাজিক ক্ষতি দুটোই হতে পারে।
তাদের পরামর্শ, প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক না কেন, এর ব্যবহার হতে হবে নৈতিক ও দায়িত্বশীলভাবে। অন্যথায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হতে পারে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টির নতুন অস্ত্র।