ব্যাংক খাতে গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণ চারগুণ বেড়েছে। ২০১২ সালে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালে বেড়ে এখন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় এসেছে। খারাপ অবস্থানে শুধু সরকারি না বেসরকারি ব্যাংকও একই অবস্থানে। তবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো ভালো আছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে তথ্য দিচ্ছে না, তার মানে তারা সেটা ফুলফিল করতে পারে না।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যাংক খাতের সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফসিল, অবলোপন সবই নিজেদের মতো করে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরের চাপে কিংবা নিজেরা ইচ্ছা করে স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এ অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে নীতি ভুল হয়। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রিয়েল টাইম তথ্য দেওয়া হয়। অথচ আমাদের এখানে সেটা নিশ্চিত না করে উল্টো তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরাতে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বাংলাদেশ ব্যাংক) নিজে যখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। তারা নিজেরা স্বাধীন বলা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের অধীনস্থ করা হচ্ছে বা কাজ করতে হচ্ছে অথচ তারা স্বাধীন। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফেরাতে স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই, যারা ব্যাংকের সার্বিক স্বাস্থ্য দেখবে এবং তুলে ধরবে। কেবল কমিশন গঠন করলেই হবে না, স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে কমিশনের।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকে ক্রমান্বয়ে তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। শরীয়া খাতের ব্যাংকে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তারল্য ছিল ৩৯ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকটির তারল্য ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে এখন মন্দঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরাসরি খেলাপি ঋণে ১ লাখ ৪৫ লাখ ৪৩৩ কোটি টাকা। এর বাইরে রাইটআপ, পুনঃতফসিলিসহ মন্দঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এছাড়া অর্থ ঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪৩ টি মামলার বিপরীতে এক লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আটকে আছে। যার বড় অংশ ফেরত আসবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক ঋণের বড় অংশ এখন ইচ্ছাকৃত খেলাপি। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় কিন্তু ফেরত দিতে হবে তেমন কোনো দায়বদ্ধতা তাদের ভেতরে কাজ করে না। অন্য দিকে কিছু ভাল গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঋণ পরিশোধ করছে। এ অবস্থা আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সিদ্ধান্তের জন্য ব্যবসায়ী ডাকে, রাজনীতিবিদ ডাকে। সকালে সিদ্ধান্ত নেয়, বিকেলে পরিবর্তন করে। অবস্থা এমন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন একটি সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে বলেই আজ ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে। আমরাও চালিয়েছি, এত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিনি, এত সার্কুলার দেইনি।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক ইসতিয়াক আহমেদ।