প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অপ্রদর্শিত আয়  বৈধ করার পক্ষে আইসিএবি

দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’র(আইসিএবি) সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন বলেছেন, `ব্যক্তিশ্রেণির অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত; তাই এ বিষয়ে মন্তব্য নেই। তবে আমরা নৈতিকতার মান বজায় রাখার পক্ষে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার পক্ষে আইসিএবি।’ একইসঙ্গে কর্পোরেট করের হার হ্রাস ও উৎসে কর কর্তনসহ (টিডিএস) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর সংস্কার ব্যবস্থাকে সমর্থন জানিয়েছে আইসিএবির সভাপতি।

শনিবার (৮ জুন) আইসিএবি কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার একটি সময়োপযোগী ও ব্যাপক আকারের বাজেট সংসদে পেশ করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের জিডিপির ১৪.২ শতাংশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক সংকট, ডলার সংকট, ব্যবসা-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা এবং অন্যান্য বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে যা আমাদেরকে একটি উন্নত দেশে পৌঁছানোর যাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আইসিএবি’র সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ূন কবির বলেন, পুঁজিবাজারে করসুবিধা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আত্মহত্যা ঠেকানো যায়নি। ভালো ভালো অনেক কোম্পানি এখনও বাজারে আসেনি। করসুবিধা দিয়ে বাজারের সবকিছু ঠিক করা সম্ভব নয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বা মৌলভিত্তির ওপর নির্ভর করে পুঁজিবাজার চাঙা হওয়ার কথা। করকাঠামোর জন্য পুঁজিবাজারের এই পরিস্থিতি হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, সরকারি ব্যাংক তুলনামূলক বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত কম ঋণ পাবে। ফলে বিনিয়োগ কম হবে। এনবিআরকে বেশি রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, তা বিঘ্নিত হবে। তাঁর মতে, এই বাজেটে নতুন কর হারের কারণে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের মধ্যে নিচের দিকের এবং ওপরের দিকের করদাতারা চাপে থাকবেন; মধ্যপর্যায়ের করদাতারা কিছুটা সুবিধা পাবেন।

আইসিএবির বাজেট প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, বিগত বছরগুলোর ন্যায় এই বছরেও আইসিএবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২৪-২৫ বাজেট সংক্রান্ত রাজস্ব আইনের যেমন- আয়কর আইন ২০২৩ ও আয়কর বিধিমালা ২০২৩, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬, কাস্টমস আইনসহ অন্যান্য আইন ও বিধির উপর প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আইসিএবি’র পক্ষ থেকে তিনি সরকারের প্রশংসা করেন। দুই বছরের জন্য প্রযোজ্য করের হার প্রবর্তন; প্রাইভেট কোম্পানি এবং ওয়ান পার্সন কোম্পানির (ওপিসি) জন্য করের হার হ্রাস করা; নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর উৎসে কর হ্রাস; স্বাভাবিক ব্যক্তি, প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা দানে নিয়োজিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৫ কোটি টাকার নিম্নে গ্রস প্রাপ্তি রয়েছে এরূপ কোন ফার্ম, ট্রাস্ট, ব্যক্তিসংঘ, ফাউন্ডেশন, সমিতি এবং সমবায় সমিতি ব্যতীত অন্যান্য সকল করদাতার জন্য নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর বাধ্যবাধকতার বিধান রাখার সুপারিশকে স্বাগত জানান।

সরকার নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আরও বিবেচনা করতে পারে বলে মনে করছে আইসিএবি। রাষ্ট্রপতির আদেশে বা সংসদীয় আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং একই আইনের বিধি বিধান অনুসারে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যারা শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে নিয়োজিত, ওই সকল পেশাদার এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সপ্তম তফসিলের অধীনে একই কর কাঠামোর আওতায় আনা। মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া পূর্ব নির্ধারিত শতাংশের হার, মানদণ্ড এবং দৈবচয়নের ভিত্তিতে ট্যাক্স–ভ্যাট নিরীক্ষার নথি নির্বাচন করা এবং নিরীক্ষা পদ্ধতি সহজীকরন।

আইসিএবি ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক আইনে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলির প্রশংসা করেছে। এরমধ্যে রয়েছে - আপীলেট ট্রাইব্যুনাল এবং আপীল কমিশনারেটে আপিলের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার সময়, জরিমানা ব্যতীত চাহিদার ২০% এর পরিবর্তে ১০% প্রদান করা; ১০ কোটি টাকার উপরে টার্নওভার রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানকে কর্তৃপক্ষ হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকরণে ভ্যাট আহরণ বাড়বে; ভ্যাট নেট সম্প্রসারণ করার জন্য ইএফডিএমএস স্থাপনের উদ্যোগ।

বাংলায় নতুন শুল্ক আইন ২০২৩ প্রণয়ন ও ৬ জুন ২০২৪ থেকে এর কার্যকর করাকে স্বাগত জানায়। যার মধ্যে নিম্নলিখিত বিধানগুলো উল্লেখযোগ্য- নতুন শুল্ক আইনে ধারা ৯০(৩) এর আওতায় স্ব-মূল্যায়নের বিধান চালু করা হয়েছে; দাবিকৃত শুল্ক এবং কর বা জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে শুল্ক বা কর ৫০% থেকে কমিয়ে ১০% করা হয়েছে; ফেরত দাবি করার সময়সীমা ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে ৩ বছর করা হয়েছে; বিল অফ এন্ট্রি বা বিল অফ এক্সপোর্ট এর স্থলে নির্ধারিত ফরম ও পদ্ধতিতে ঘোষণা করে শুল্কায়ন এবং পণ্য ছাড়করনের সুযোগ প্রদান; পণ্য ঘোষণা প্রতিস্থাপন, সংশোধন ও প্রত্যাহারের বিধান রাখা।