এখনও পেঁয়াজের মৌসুম চলছে। তার ভিতরে চোখ রাঙাচ্ছে মশলার ভিতরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় এই পণ্যটি। গরীব থেকে শুরু করে সবশ্রেণি পেশার মানুষের কাছে পেঁয়াজের কদর রয়েছে। সেই পেঁয়াজ এখন সেঞ্চুরির পথে। এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে সেটি সেঞ্চুরি ধরবে এমনকি তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে ঈদুল ফিতরের পরে হঠাৎ করেই এই দাম বাড়ানোকে সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে মনে করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
ক্রেতা হারুন অর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, গত রোজার মাসেও পোঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকার ঘরেই ছিল। এই দাম দেখে ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলাম। এরপর ফিরে এসেই পেঁয়াজের খপ্পরে পড়েছি! সব ধরনের পেঁয়াজের দাম দ্বিগুন থেকে তিনগুণ বেড়েছে। দোকানদারদের সেই পুরানো বোল, মোকামে দাম বাড়তি। তার অভিযোগ সামনে কোরবানির ঈদ এই সুযোগে পেঁয়াজের দাম আগের থেকেই বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট। যাতে ওই সময়ে তারা বলতে পারে, কই পেয়াঁজের দামতো বাড়েনি! কিন্তু এই যে মাস দুয়েক ধরে যে মুনাফা তুলে নিল তার জবাব কী?
একই কথা বললেন মিরপুর থেকে আসা আব্দুল্লাহ শিকদার, কয়েকদিন থেকেই অশান্ত পেঁয়াজের বাজার। ত্রিশ টাকার পেঁয়াজ এখন ৭০ টাকা। এমন ভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের পকেট কাটা হচ্ছে। কিন্তু তা থেকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসছে না।
ঢাকা বিভাগের ভিতরে সবোর্চ্চ পেঁয়াজের আবাদ হয় ফরিদপুরে। সেখানেও এখন পুরো মৌসুম চললেও বাজারের দাম বেড়েই চলেছে। অথচ উৎপাদক চাষী দাম পাচ্ছে না।
এদিকে বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সপ্তাহান্তে আবারও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ভালো মুনাফার আশায় অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা মজুদ পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে তেমন আগ্রহী নন। কেননা, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোয় বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে দেখা গেছে রাজধানীতে পেঁয়াজের খুচরা দাম ৪০ থেকে ৬৫ টাকা। আগের মাসের তুলনায় দাম সাড়ে ২৩ শতাংশ বেশি। এই মশলা জাতীয় পণ্যটি এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
ঢাকার খুচরা বিক্রেতা ও পাইকাররা এবং পাবনা ও ফরিদপুরের মতো প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলার কৃষকরা জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ আগেও খেত থেকে সরাসরি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখন আর খেতে কোনো পেঁয়াজ নেই। কৃষকরা পেঁয়াজ তুলে মজুত করে রেখেছেন। মৌসুমের শুরুতে উৎপাদন খরচ তুলতে অনেক কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। তাই হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে গিয়ে দাম কমেছিল। এখন তারা ভালোমানের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। বাড়তি দামের আশায় বাকি পেঁয়াজ বিক্রির ক্ষেত্রেও তারা সময় নিচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার গত মার্চ মাস থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। দেশে পেঁয়াজের চারা সাধারণত ডিসেম্বরে রোপণ করা হয়। মার্চ-এপ্রিলের দিকে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। চলতি বছরের শুরুতেই উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা আক্ষেপ করেছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, চলতি মৌসুমে মোট উৎপাদন হবে ৩৯ লাখ টনের বেশি। দেশের চাহিদা মেটাতে তা যথেষ্ট হলেও পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আরও ছয় থেকে সাত লাখ টন আমদানির প্রয়োজন।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. কালাম শেখ বলেন, আমাকে কৃষক বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কৃষিসচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়া মনে করেন, কৃষকের ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করতে পেঁয়াজের খুচরা দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা হওয়া দরকার। উৎপাদন খরচ থেকে খুচরা বিক্রির দামের ফারাক ১৫ থেকে ২০ টাকা হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, খুচরা বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকার কম ছিল, তখনো কৃষকদের লোকসান হচ্ছিল।