এডিবি’র ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন ঘোষণা, সুবিধা পাবে বাংলাদেশও

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে, যার ফলে এডিবি’র সকল সদস্য দেশগুলো উপকৃত হবে। সুবিধা পাবে বাংলাদেশও।  ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত এডিবির ৫৯তম বার্ষিক সভায় এই ঘোষণা দেন সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা।

এডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২২-২০৩০ সময়কালের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা উদ্যোগের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত ১৪ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের সঙ্গে নতুন করে ২৬ বিলিয়ন ডলার যোগ করা হয়েছে, যা মোট অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলার সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে ব্যবহার হবে।

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, যেখানে খাদ্য নিরাপত্তা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন, খরা, বন্যা ও প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয়ের কারণে কৃষিখাত ক্রমাগত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এডিবি’র এই সহায়তা বাংলাদেশ সরকারকে কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন, টেকসই কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ, কৃষক সহায়তা এবং কৃষি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।

এডিবি যেসব স্তরে অর্থায়ন করবে তা হলো: কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ উন্নয়ন, সরবরাহ চেইন ও বিতরণ ব্যবস্থা জোরদার, পুষ্টি নিরাপত্তা ও খাদ্যাভ্যাস উন্নয়ন এবং কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তার সক্ষমতা বৃদ্ধি।

এছাড়াও, প্রকল্পগুলো পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি হ্রাস এবং গ্রামীণ জীবিকায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মাসাতো কান্দা বলেন, খরা, বন্যা, চরম তাপমাত্রা এবং অবক্ষয়িত প্রাকৃতিক সম্পদ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। আমাদের সম্প্রসারিত সহায়তা দেশগুলোর ক্ষুধা দূরীকরণ, খাদ্যাভ্যাসের মানোন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করবে। একইসঙ্গে কৃষক ও কৃষি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।

বাংলাদেশের জন্য এ অর্থায়ন কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারকে এখন কৃষি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ জোরদার করতে হবে, জলবায়ু সহনশীল ফসল চাষে উৎসাহ দিতে হবে, কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে এবং বাজার ব্যবস্থাপনা ও মূল্য স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এডিবি’র বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অর্থায়ন পেয়েছে, তবে এবার আরও সুসংগঠিত ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুফল তোলা সম্ভব।

এডিবি’র ৩০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন শুধু এশিয়ার নয়, বাংলাদেশের জন্যও একটি পরিবর্তনশীল সুযোগ। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করতে এই সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এটি শুধু কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে না, বরং দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।