নতুন বাজেট ২০২৫-২৬ পাস হচ্ছে আজ  

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, বিপর্যস্ত আর্থিক খাত সংস্কার ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের মতো চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে রোববার (২২ জুন)  পাস হচ্ছে ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’ শিরোনামে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন ও  রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পর এই বাজেট ১ জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য কার্যকর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,  রোববার বেলা ১০টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠেয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হবে নতুন বাজেট। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপত্বি করবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। দেশে বর্তমানে জাতীয় সংসদ কার্যকর না থাকায় এই প্রক্রিয়ায় বাজেট অনুমোদন করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, এ বছর সংসদ কার্যকর না থাকায় সরকার সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেটের বিষয়ে মতামত গ্রহণ করে। ১৯ জুন পর্যন্ত অনলাইনে এই মতামত গ্রহণ করা হয়। যার সমন্বিত প্রতিবেদন রোববারের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

এর আগে গত ২ জুন বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’ শীর্ষক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। নতুন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা- যা চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৬) মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।

সূত্র জানিয়েছে, এ বছর বাজেটে আবাসন খাতে থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। তবে তা ‘কালো টাকা’ নামে নয়— অপ্রদর্শিত অর্থ নামে। বাজেট ঘোষণার পর ব্যাপক সামলোচনার প্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নগদ অর্থ, বন্ড বা সিকিউরিটিজ, আমানত, আর্থিক স্কিম ও যন্ত্রপাতিসহ সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধ আয়কে বৈধ করার বিধান বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ফ্ল্যাট ও জমি কেনার ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করেনি কর প্রশাসন। তাই এক্ষেত্রে কোনও  প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়ে নাগরিকদের অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নতুন বাজেট সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অল্প কয়েক মাসে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে স্থিতিশীল করার কাজটি প্রায় সম্পন্ন করা সম্ভব হলেও পরিপূর্ণ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে আমাদের এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও তা এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাবও দেশের অর্থনীতির ওপর পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি যে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করা হয়েছে, তার কোনও নেতিবাচক প্রভাব আপাতত বাজারের ওপর পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও— এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। এ সবঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, বলেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। 

‘আপাতত প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির বদলে অর্থনীতির ভিত মজবুত করার দিকে আমরা অধিকতর মনোযোগ দিচ্ছি’, বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী ভিতই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান। আগামীর সেই বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সব স্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। ইনশাআল্লাহ্, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আলোকবর্তিকা।’