রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ না করায় ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে এই ঘোষণা আসার পর ভারতের পণ্যের ওপর মোট আমদানি শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশে— যা বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ তালিকা’ অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক পড়ছে ভারতের ওপর। বাংলাদেশের পণ্যে শুল্কহার নির্ধারিত হয়েছে ২০ শতাংশ, যেখানে পাকিস্তান পাচ্ছে আরও কম, ১৯ শতাংশ। চীনের শুল্কহার ৩০ শতাংশ হলেও তা ভারতের চেয়ে এখনও ২০ শতাংশ কম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের ওপর এই উচ্চ শুল্ক বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত সুযোগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়া, জুতা ও হালকা শিল্পপণ্যের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোশাক আমদানিকারক বাজার, যেখানে ভারত ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন ভারতের চেয়ে কম শুল্কহারের কারণে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বাড়বে, যা মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের শেয়ার বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে পারে।
একইভাবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থানও ভারতের তুলনায় ভালো। যেমন: ভিয়েতনাম ২০%, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ১৯% শুল্ক। এই শুল্ক হারগুলো ভারতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ফলে ইলেকট্রনিকস, জুতা ও হালকা শিল্পপণ্যে এসব দেশের মার্কিন বাজারে প্রবেশ আরও সহজ হবে।
এদিকে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা এখনও অমীমাংসিত। মূল বাধা—কৃষিপণ্য ও গাড়ি খাতে মার্কিন শর্ত। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত জিএম (জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড) খাদ্যপণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক এবং মার্কিন কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করুক। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও কৃষক-ভিত্তিক অর্থনীতির কারণে বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে- বাংলাদেশ যদি উৎপাদন সক্ষমতা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবহন অবকাঠামো দ্রুত উন্নত করতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষত মার্কিন খুচরা ক্রেতারা যদি ভারতীয় পণ্যের বদলে কম শুল্কযুক্ত বাংলাদেশের পণ্য বেছে নিতে শুরু করে, তাহলে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।
এদিকে হোয়াইট হাউস অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিকে নিশানা করেছে। আমরা ইতিমধ্যে এসব বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। ঘটনা হলো আমাদের আমদানি নির্ভর করে বাজারের ওপর। আর এটা করা সার্বিকভাবে ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করছে এমন সব পদক্ষেপের জন্য, যেগুলো আরও বেশ কয়েকটি দেশ নিচ্ছে তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য।’