দুবাইসহ বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলছে। টানা কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর এবার আসছে স্বস্তির ইঙ্গিত। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আগস্ট থেকেই শুরু হতে পারে স্বর্ণের দামের পতন।
এফএক্সপ্রোর প্রধান বাজার বিশ্লেষক অ্যালেক্স কুপ্টসিকেভিচ জানান, গত পাঁচ মাস ধরে স্বর্ণবাজার স্থবির অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিনের অতিরিক্ত ক্রয়চাপ এখন বাজারে উল্টো প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। তার মতে, এই চাপের কারণে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে, এমনকি তা ২ হাজার ২০০ ডলার পর্যন্তও নামতে পারে। তবে বাজারে যদি চরম বুলিশ অবস্থা তৈরি হয়, তাহলে দাম উল্টো বেড়ে ৪ হাজার ৬০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দুবাই জুয়েলারি গ্রুপের তথ্যমতে, সোমবার (২৫ আগস্ট) ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি গ্রাম ছিল ৪০৫.৫ দিরহাম। আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে এ দাম। একই দিনে ২২ ক্যারেট বিক্রি হয় ৩৭৫.৫ দিরহামে, ২১ ক্যারেট ৩৬০.২৫ দিরহামে এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ ৩০৮.৭৫ দিরহামে।
আন্তর্জাতিক বাজারেও সামান্য নিম্নগতি দেখা গেছে। সোমবার (২৫ আগস্ট) এক আউন্স স্পট গোল্ডের দাম ছিল ৩,৩৬৪.৭৬ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ০.২৩ শতাংশ কম।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সেপ্টেম্বরে মুদ্রানীতিতে শিথিলতা আনতে পারে। তবে এরপর আবার কঠোর অবস্থানে ফিরলে ডলারে বিনিয়োগের ঝোঁক বাড়বে। এর ফলে স্বর্ণের প্রতি চাহিদা কমে গিয়ে দাম নিম্নমুখী হতে পারে।
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করে। এতে স্বর্ণের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং দুই বছরের মধ্যে দামের বৃদ্ধি দাঁড়ায় প্রায় ১.৭ গুণ। ২০২৪ সালের এপ্রিলে তা রেকর্ড অতিক্রম করে আউন্সপ্রতি ৩,৫০০ ডলারে পৌঁছায়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি ভিন্ন। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ কেনা কমিয়েছে। পাশাপাশি, স্বর্ণভিত্তিক এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগও কমেছে। ফলে স্বর্ণবাজারের ঊর্ধ্বমুখী গতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে পুরো চিত্র একেবারে নেতিবাচক নয়। ডলার দুর্বল হলে, মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের রিটার্ন কমে গেলে কিংবা ফেড যদি আবার প্রণোদনামূলক নীতি গ্রহণ করে- তাহলে স্বর্ণবাজার আবারও চাঙ্গা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
স্বর্ণের দামের এই সম্ভাব্য ওঠানামা সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও বিনিয়োগকারীদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে যেসব দেশে স্বর্ণ আমদানি পুরোপুরি বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীল, সেসব দেশের অর্থনীতিতে এর অভিঘাত আরও গভীর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: খালিজ টাইমস