একদিকে হিমালয়ের দিগন্ত বিস্তৃত রূপ আর অন্য দিকে আধ্যাত্মিকতা, ভুটানের মূল আকর্ষণ। এছাড়া সোনালি ধানক্ষেত, নদী, নানা রঙের অর্কিড, ছোট ছোট রঙিন কাঠের বাড়ি সব মিলিয়ে ভুটান যেন স্বপ্নের দেশ। দেশটি বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশও বটে। তাই দেশটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাজারও পর্যটক সেখানে ভিড় জমায়।
আর ভুটান ভ্রমণের সেরা সময় শুরু হয় নভেম্বর মাসের পর থেকে। এ মাসের পুরোটা সময় ভুটানিদের নানান ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পরিষ্কার আকাশসহ এ সময়ের অনুকূল আবহাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি রাফটিং ও হাকিংয়ের জন্যও উপযোগী।
বাংলাদেশ থেকে কম দূরত্বের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর মধ্যেও অন্যতম ভুটান। এমনকি ভুটান যেতে বাংলাদেশিদের ভিসাও প্রয়োজন পড়ে না। শুধু পাসপোর্ট থাকলেই কিছু ফি পরিশোধ করে ভুটানে ভ্রমণের অনুমতি পান বাংলাদেশিরা।
যেভাবে যাবেন?
ভুটানের থেকে সরাসরি বিমান চলাচল করে ঢাকাতে। নির্ঝঞ্ঝাট হলেও আকাশপথে বেশি ভাড়া গুণতে হয়। এক্ষেত্রে সড়কপথেও যাওয়া যেতে পারে। ভারত হয়ে যেতে হয় বিধায় এক্ষেত্রে ভারতের ট্রানজিট ভিসার প্রয়োজন হবে। সময়সাপেক্ষ হলেও এই পথে খরচ অনেকটা কম। এর জন্য প্রথমে বাসে যেতে হবে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত। সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে চ্যাংড়াবান্ধা থেকে বাসে উঠে নামতে হবে ময়নামতি বাইপাসে। সেখান থেকে আরেক বাসে চলে যেতে হবে শিলিগুড়ি জয়গাঁ। সেখানকার ভারতীয় স্থলবন্দরে ভারত থেকে ভুটানে প্রবেশের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তারপর ভুটান গেট থেকে অনুমতি নিয়ে থিম্পুতে প্রবেশ করা যাবে।
দেখবেন যেসব দর্শনীয় স্থান
থিম্পু
রাজধানী শহর থিম্পুতে হাঁটা দূরত্বেই দেখা যাবে থিম্পু নদী, মেমোরিয়াল চর্টেন, সিটি ভিউ পয়েন্ট, ক্লক টাওয়ার, থিম্পু জং, পার্লামেন্ট হাউস, লাইব্রেরি ও থিম্পু ডিজং। শহর থেকে একটু দূরেই রয়েছে বুদ্ধ দর্দেন্মা স্ট্যাচু, থিম্পু ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চর্টেন ও চিড়িয়াখানা, যেখানে সংরক্ষিত আছে ভুটানের জাতীয় পশু তাকিন।
পুনাখা
এখানে কম সময়ে অনেকগুলো পর্যটন এলাকা ঘোরার উপায় হচ্ছে সর্বপ্রথম দোচুলা পাস যাওয়া। ফেরার পথে একে একে পড়বে পুনাখা জং, আর্ট স্কুল, ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও ফোক হেরিটেজ যাদুঘর। ভুটানের যে স্থানটি রাফটিংয়ের জন্য জগদ্বিখ্যাত, সেটি হচ্ছে এই পুনাখা। রাফটিংয়ের জন্য এই শহরে একটা দিন থাকা উচিত।
লাখাং মন্দির, তালো মনস্ট্রি ও পেলিরি মন্দির ঘুরে চলে যাওয়া যেতে পারে ফু ছু নদীতে। এখানে রাফটিংয়ের সময় চোখে পড়বে সাস্পেন্শন ব্রিজ। এছাড়া পুনাখার নান্দনিক ঐশ্বর্যের পরশ পেতে ঘুরে আসা যেতে পারে টর্সা ন্যাচারাল রিজার্ভার ও ন্যাশনাল পার্ক।
পারো
ভুটানের সর্বোচ্চ রাস্তা চেলে লা পাস অবস্থিত এই শহরে। মেঘমুক্ত দিনে এই রাস্তা থেকে চোখে পড়ে দূরের জলমহরি পর্বত। পারোর জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইগারস নেস্ট, রিনপুং জং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, পারো মনস্ট্রি, পারো চু ও কিচু মনস্ট্রি। শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান তাং সাং। হিমালয়ের এই দর্শনীয় জায়গাটি দেখার জন্য পারোতে ন্যূনতম একটি দিন অবশ্যই থাকতে হবে।
যেখানে থাকবেন
ভুটানের হোটেল ভাড়া অনেকটাই বেশি। বিলাসবহুল কোনো রিসোর্টে থাকতে হলে খরচের পরিমাণও বাড়বে। তবে আপনি যদি অনলাইনে একটু খোঁজাখুঁজি করেন, তুলনায় কম বাজেটের হোটেলও পেয়ে যাবেন। এছাড়া প্রচুর ধর্মশালাও আছে। সেখানেও থাকতে পারেন। হোটেলের মতো সব রকম সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া গেলেও, সাশ্রয় হবে অনেকটাই।
ভুটান ঘুরে বেড়ানোর সময় কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ভুটানের এটিএম বুথগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারিগরি সমস্যা থাকে। এমনকি প্রায় ক্ষেত্রে বুথে বেশি টাকা থাকে না। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রতিদিনের আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বিকল্প উপায় রাখতে হবে।
মোবাইলে চার্জসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য সঙ্গে একটি ইউনিভার্সাল অ্যাডাপ্টার রাখা উচিত।
বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের সময় সেখানকার ভাবগাম্ভীর্য ও নির্দেশনাবলী অনুসরণ করা উচিত।