পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইসলামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃকৃতির নিবর সাক্ষী হয়ে থাকা অসংখ্য স্থাপনা।
ইসলাম ধর্মের পুরোনো দিনের ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেকে আরও নিবিড়ভাবে জড়াতে চান ভ্রমণ পিপাসুরা। ঘুরে ঘুরে এসব ঐতিহ্য দেখতে চান। অনেকে আবার সমৃদ্ধ করতে চান নিজের জানাশোনার ভান্ডার।
ইতিহাস, স্থাপত্য আর আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনে সমৃদ্ধ ১২টি উল্লেখযোগ্য ইসলামী ঐহিত্যবাহী ভ্রমণ স্পটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো-
১. পোচিটেল, হার্জেগোভিনা
অটোমান আমলের স্থাপত্যে ভরপুর ছোট্ট এক পাহাড়ি শহর। ১৪শ শতকে গড়ে ওঠা এই বাণিজ্যকেন্দ্রের মসজিদ আর হাম্মাম এখনো পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য নিখুঁত একটি গন্তব্য।
২. বসকারশিয়া, সারায়েভো, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
সারায়েভোর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বসকারশিয়া শহরের প্রাচীনতম বাজার এলাকা। ১৫শ শতকের এই অটোমান বাজারের সরু সরু গলিতে দোকান, ক্যাফে আর ছোট ছোট রেস্তোরাঁ।
কেন্দ্রস্থলের ‘পিজন স্কয়ার’-এ রয়েছে বিখ্যাত সেবিলজ ফোয়ারা, সারায়েভো ক্লক টাওয়ার ও গাজি হুসরেভ-বেগ মসজিদ। বসনিয়ার সংস্কৃতি আর ইতিহাসের স্পন্দন খুঁজতে চাইলে এখান থেকেই শুরু হোক যাত্রা।
৩ . স্তারি মোস্ত সেতু , মোস্তার, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
নেরেতভা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে ১৬শ শতকে অটোমানদের তৈরি এই সেতু। একসময় পূর্ব-পশ্চিমের বাণিজ্যিক যোগসূত্রের প্রতীক ছিল এটি।
১৯৯৩ সালে ধ্বংস হলেও ২০০৪ সালে মূল নকশা ও উপকরণ দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়। আজও মোস্তারের মানুষের গর্ব আর পর্যটকদের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য।
৪. দরবেশ হাউস , বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি সুফিবাদের গবেষণা ও প্রচারের জন্য পরিচিত। নিয়মিত ওয়ার্কশপ আর রিট্রিট হয় এখানে। শান্তিপ্রেমী বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান খুঁজছেন- তাদের জন্য এ এক অনন্য ঠিকানা।
৫. কোআগান্নু কবরস্থান, মালদ্বীপ
১৮-১৯ শতকের অসংখ্য কবর নিয়ে এই কবরস্থানকে বলা হয় মালদ্বীপের প্রাচীনতম কবরস্থান। এখানে রাজপরিবারের সদস্যদেরও কবর আছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আর নানা প্রজাতির গাছপালা মিলিয়ে এটি এক অনন্য দর্শনীয় স্থান।
৬. উথেইমু প্যালেস, মালদ্বীপ
মালদ্বীপের সুলতান মোহাম্মদ দোশিমিনার প্রাসাদটি এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। ঐতিহ্যবাহী মালদ্বীপীয় নকশায় তৈরি প্রাসাদে সুলতানের শয়নকক্ষ, নামাজঘর ও বাগান এখনো সংরক্ষিত। মালদ্বীপের ইতিহাস জানার অসাধারণ সুযোগ।
৭. মারাকেশের সাত সাধক, মরক্কো
মারাকেশ শহরের সাতজন মুসলিম সাধকের মাজার নিয়ে সাজানো এক অনন্য ধর্মীয় ঐতিহ্য। রঙিন টাইলস আর মোজাইকে সাজানো কবরগুলোতে এখনো ফুল নিয়ে দোয়া করতে যান স্থানীয়রা। ধর্মীয় হোক বা না হোক- ইতিহাস আর নান্দনিকতা দুটোই মুগ্ধ করবে।
৮. সাহাবি গাছ, জর্ডান
কথিত আছে, মাত্র ১২ বছর বয়সে ব্যবসায়ী সফরে থাকা অবস্থায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এখানেই খ্রিস্টান পাদ্রী তার নবুওয়াতের আলামত দেখেছিলেন। আজও মুসলিমদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
৯ . উলুগ বেগ মানমন্দির, উজবেকিস্তান
১৫শ শতকে তিমুরীয় শাসক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী উলুগ বেগ নির্মাণ করেছিলেন এই মানমন্দির। বিশাল সেকস্ট্যান্ট আর ধ্বংসাবশেষ এখনো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। মধ্যযুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর নিদর্শন।
১০ . খাস্ত ইমাম স্কয়ার, তাশখন্দ, উজবেকিস্তান
বিশ্বের প্রাচীনতম কোরআন সংরক্ষিত এই স্কয়ারে। তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফফান (রা.)-এর পড়া কোরআনটি আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। ইসলামী সংস্কৃতি আর ইতিহাসে আগ্রহীদের জন্য অবশ্যই দর্শনীয়।
১১. কালতা মিনার মিনার, খিভা, উজবেকিস্তান
১৯শ শতকে খিভার খানের নির্দেশে তৈরি শুরু হয় এই মিনার। পরিকল্পনা ছিল ৭০ মিটার উঁচু করার, কিন্তু কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। তবু মোটা নকশা আর অনন্য রঙের কারণে আজও এটি খিভার প্রতীকী স্থাপনা।
১২ . সুলাইমান টু পর্বত, কিরগিজস্তান
এই পাহাড়ের গুহায় নবী সুলাইমান (আ.)-এর কবর আছে বলে ধারণা করা হয়।
স্থানীয় কাহিনী আছে, যে নারী এখানে পবিত্র শিলায় হেঁটে যান, তিনি সুস্থ সন্তান লাভ করেন। দর্শনার্থীরা গাছের ডালে ছোট কাপড় বেঁধে প্রার্থনা করেন। সূত্র : মুসলিম ভাইব