সৌদি আরবে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। আজ হাজিরা অবস্থান করছেন আরাফার ময়দানে। এটাই হজের অন্যতম স্তম্ভ। এ বছর ২০ লাখের বেশি মানুষ হজে যাওয়ার কথা থাকলেও হজ করছেন ১৫ লাখের বেশি মুসল্লি। করোনা মহামারির পর গত বছর (২০২৩ সালে) বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশ থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষের হজ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে পেরেছিলেন ১৮ লাখের বেশি মানুষ।
করোনার আগে ২০১৯ সালে হজে অংশ নিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসল্লি। সে বছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজে অংশ নিয়েছিলেন। হজে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা সেই বছরই ছিলো সর্বোচ্চ।
হজ আল্লাহপাকের একটি ফরজ বিধান। আর ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। যাদের শারীরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে তাদের উপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হজের সঙ্গে অর্থনীতির বিষয়টা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তবে এই অর্থনৈতিক বিষয়টিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান। সৌদি আরবে অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে জ্বালানি তেল। তবে দেশটি জ্বালানি তেলের পাশাপাশি ভ্রমণ বা পর্যটন শিল্পকে সামনে আনতে যাচ্ছে। আর এই জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে দেশটি। বিন সালমান ২০৩০ ভিশন হাতে নিয়েছে। এই ২০৩০ ভিশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ইসলামে বৈধ নয় এমন অনেক কিছুই অনুমোদন দিচ্ছে দেশটি। পর্যকটদের আকর্ষণ করতে ইতোমধ্যে চালু করেছে নাইট ক্লাব। এখানেই শেষ নয় নির্ধারিত স্থানে দিয়েছে মদ বা অ্যালকোহলের বৈধতা। অথচ ১৯৫০ সালের পর থেকে দেশটিতে অ্যালকোহল সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ ছিলো।
২০৩০ ভিশন বাস্তবায়নে বিন সালমান ইসরায়েলের সাথে হাত মিলাতেও কার্পণ্য করেননি। তবে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামলা চালানোর ফলে কিছুটা বিপাকে পড়েছে। গাজায় ইসরায়েলের অমানবিক হামলায় জেগে উঠেছে বিশ্বের প্রতিটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ হলেও কোনো ধরণের বিক্ষোভ করতে দেয়নি সৌদি সরকার। দেশটির নাগরিকদের মুখে কুলুপ এঁটে রাখতে বাধ্য করেছে দেশটি। বিশ্বের প্রায় সব দেশই ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অবশ্য হজ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে সৌদি আরব ইসরায়েলি হামলায় শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে। ইসরায়েলি হামলায় যারা শহীদ বা আহত হয়েছেন তাদের এক হাজার পরিবারের দুই হাজার মানুষকে হজ করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের শহীদদের প্রতি সৌদি আরবের এই সম্মানকে ছোট করে দেখারও কোনো অবকাশ নেই।
সৌদি আরবে ১৫ লাখ মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত পবিত্র মক্কা ভূমি। আবাসিক হোটেলগুলো কানায় কানায় পূর্ণ। বছরের এই সময়টাতেই সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য থাকে একটু বেশি বেচা-বিক্রির। দেশটিতে এতো মানুষের সমাগমে বাড়তে শুরু করেছে হরেক রকমের বেচা-বিক্রিও। হজের প্রায় পুরো সময়টাতে ভীড় লেগে থাকে মক্কার গ্রান্ড মসজিদের পাশে আস-সাফা শপিং মলে। সেখানে আতর-তসবি ও খেজুরসহ হরেক রকমের উপহার কিনতে মানুষ ২৪ ঘণ্টাই ভীড় করে। শুধু এই মার্কেটে নয়, আশেপাশের অন্যান্য মার্কেটগুলোও খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টাই। মক্কার চেম্বার অব কমার্সের আশা এ বছর ব্যবসা অনেক ভালো হবে। বেচাবিক্রি পৌঁছাবে ১৫ বিলিয়ন ডলারে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর হজের মৌসুমে বেচাবিক্রি হয়েছিল ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। হজের মৌসুমে হজের চেয়ে বেচাবিক্রি ও ব্যবসা-বাণিজ্যই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সৌদি ব্যবসায়ীদের কাছে।