সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত ও কুয়েতে আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বাবার হাত ধরে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করেছে। মেতে উঠেছে পশু কোরবানির আনন্দে। কিন্তু এই উল্লাসের দিনেও বিন্দুমাত্র আনন্দ নেই ফিলিস্তিনের শিশুদের। ঈদের দিনেও থেমে নেই ইসরায়েলের বোমা হামলা।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে মিল রেখে বিশ্বের অনেক দেশের মুসলিমরাই ঈদ পালন করছেন। সোমবার বাংলাদেশ ও ভারতসহ আরো কিছু দেশে ঈদ উদযাপন হবে। হবে পশু কোরবানি। আনন্দে মেতে উঠবে কোমলমতি শিশুরা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। তাদের চিকিৎসার নূন্যতম সরঞ্জামও নেই গাজায়। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ। মৃত্যুর হিসেবে তাদের নাম উঠেনি। কিন্তু তারাও নিহত।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় শুধু শিশুই নিহত হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি। অথচ আড়াই বছর ধরে যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রে। রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালালেও আড়াই বছরে নিহত হয়েছে ইউক্রেনের ৫৭৯ জন শিশু। ইউএন হিউম্যান রাইটস মনিটরিং মিশন (এইচআরএমএমইউ) অনুসারে, রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫৭৯ শিশু এবং ২ হাজার ৯৯২ জন নারীসহ মোট ১০ হাজার ৩৭৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ৬৩২ জন।
রোববার (১৬ জুন) আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলেছে, ফিলিস্তিনের ৫০ হাজার শিশুর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজার শিশুদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেছেন, তাদের অবস্থা খুবই করুণ। আমরা তাদের অবস্থা বর্ণনা করতে পারবো না। আমরা একটি নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতেও পারছি না। ইসরায়েলি হামলায় রাস্তাঘাট সব ধ্বংস হয়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে গাজার একজন শিশুকে বলতে শোনা যায়, আমরা ভেবে ছিলাম যুদ্ধ কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হবে। কিন্তু যুদ্ধ চলছেই গত নয় মাস ধরে। আমরা ইতোমধ্যে পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতর পার করেছি যুদ্ধের মাঝেই।
শিশুটি আরো বলে, আমাদের ঈদুল আজহাও যাচ্ছে ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই। আমাদের এখানে কোরবানির জন্য কোনো পশু নেই। পরার মতো নতুন কোনো পোশাক নেই। এমনি বাবা-মার হাতে কোনো অর্থও নেই। আমাদের এখানে আছে শুধু ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া কিছু ধ্বংসস্তূপ। আর আছে দুঃখ, বেদনা ও যন্ত্রণা।
অবশ্য এই দুঃখ, বেদনা ও যন্ত্রণা নিয়েও গাজার মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে উচ্চারিত হয়েছে, আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ। অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।