হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় ইসরায়েলের বিন্যামিনা এলাকায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে চার সেনা নিহত ও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। রোববার রাতের হামলাটি ছিল চলমান সংঘাতে ইসরায়েলি মাটিতে হিজবুল্লাহর সবচেয়ে প্রাণঘাতী আক্রমণ। এই হামলার পর ঘাঁটির আশেপাশে বসবাসরত ইসরায়েলিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
হামলার পর সোমবার সকাল থেকেই ওই সামরিক ঘাঁটির আশপাশে বিস্ফোরণের শব্দ এবং রকেট হামলার সতর্ক সংকেতের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। কাছাকাছি কফর কারা গ্রামের একটি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার ইউসুফ বলেন, গত রাত ছিল খুবই ভয়ংকর। একটি বিশাল বিস্ফোরণ শোনা যায়, এরপর একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসতে থাকে। প্রথমে একটি, তারপর দুটি, তিনটি ও আরও অনেক।
ইউসুফ জানান, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন এটি কোনও সংগঠিত অপরাধের ঘটনা। যেহেতু ইসরায়েলের কিছু আরব গ্রামে অপরাধের হার অনেক বেশি। তবে পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, বিস্ফোরণটি নিকটস্থ সামরিক ঘাঁটিতে হয়েছিল। এটি তার রেস্তোরাঁ থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত।
ইউসুফ বলেন, আমরা এখানে দুই বছর ধরে ব্যবসা করছি, কিন্তু বুঝতে পারিনি যে আমরা এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি আছি। হিজবুল্লাহ কীভাবে জানলো যে এই ঘাঁটি এখানে আছে? পরেরবার যদি তারা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় কী ঘটবে?
কফর কারা গ্রামের এক দোকানদার বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছি, কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই।
এদিকে, বেসামরিক ও সামরিক উভয় ধরনের যানবাহনে করে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ঘাঁটির নিকটবর্তী কিবুতজ রেগাভিমের বাসিন্দারা বিস্ফোরণ শোনেননি। তবে টেলিভিশনের ফুটেজ দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি কাছাকাছি কোথাও ঘটেছে।
কিবুতজের বাসিন্দা এয়াল নাবেট জানান, বিস্ফোরণের পরই কিবুতজের নিরাপত্তা দলকে সতর্ক করা হয়। এরপর আমরা অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টারের শব্দ শুনতে পাই।এগুলো ঘাঁটিতে যাতায়াত করছিল।
তবে বোমা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছিল বলে বাসিন্দারা কিছুটা সুরক্ষিত বোধ করছিলেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সোমবার ঘাঁটিটি পরিদর্শন করে বলেছেন, ড্রোন হামলা মোকাবিলার জন্য আমরা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
হামলার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও হামলার হুমকি দিয়ে হিজবুল্লাহ বলেছে, রবিবার হাইফার দক্ষিণে যা ঘটেছে, তা কেবল শুরু মাত্র। যদি ইসরায়েল লেবাননে আক্রমণ অব্যাহত রাখে, তবে আরও ভয়াবহ প্রতিশোধ আসছে।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহ নিয়মিতভাবে রকেট, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে। তবে সেপ্টেম্বর ২৩ থেকে শুরু হওয়া সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠেছে এবং হিজবুল্লাহর আক্রমণ ইসরায়েলের গভীরে পৌঁছাতে শুরু করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম হলেও, মাঝে মাঝে কিছু গোলাবারুদ ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং জানিয়েছে যে, হিজবুল্লাহর ড্রোন আক্রমণের হুমকি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।