ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরানে ভয়াবহ হামলা চালায়। এই অপারেশনের নাম ছিল ‘রায়েজিং লায়ন’। এই অভিযানে ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ডস করপসের (আইআরজিসি) শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এবং পরমাণু কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরমাণুবিজ্ঞানীদের টার্গেট করে ইসরায়েলের অভিযানের নাম ছিল ‘নারনিয়া’। এটা এমন একটা নাম, যা অভিযানের অসম্ভব প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে এবং এটা বাস্তব জগতের চেয়ে অনেকটা কাল্পনিক মনে হতে পারে। পুরো অভিযানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের নির্মূলের জন্য চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। তাদের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন অগ্রাধিকারে তালিকা করা হয়েছিল।
সামরিক দক্ষতা সম্পন্ন এবং তাদের প্রতিস্থাপনে সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হবে, এমন বিজ্ঞানীদের হত্যায় তালিকার শীর্ষে স্থান দেওয়া হয়েছিল। এরপর ইসরায়েল গুরুত্ব অনুসারে একটি হিট লিস্ট তৈরি করেছিল। গোয়েন্দাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই তালিকা করা সম্ভব হয়। হত্যার শিকার বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা পরমাণু কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। অন্তত ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
অভিযানের নেপথ্যের কাহিনি
আইডিএফের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযানের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন :অভিযানের পরিকল্পনা করতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিমান বাহিনীর ১২০ জন সদস্যকে ‘ইউনিট ৮২০০’-এর একটি স্থাপনায় আনা হয়েছিল। জানুয়ারির মধ্যে কোনো সমাধান না পাওয়ায় চাপ বাড়তে থাকে। ঐকমত্য হয়েছিল যে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মকর্তা বলেনন, “গত বছর আমরা একটি ‘টার্গেট ব্যাংক’ তৈরি শুরু করেছিলাম। সাফল্য আসে যখন আমরা একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি এবং একটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটি আবিষ্কার করি। তবে টার্গেট ব্যাংকে পর্যাপ্ত লক্ষ্যবস্তু ছিল না। প্রতিটি দলের নিজস্ব লক্ষ্য ছিল :পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করা এবং কমান্ড সেন্টার ও রাডার সিস্টেম ধ্বংস করা। তখনই অপারেশন ‘রায়েজিং লায়ন’ শুরু হয়।”
মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ :ইসরায়েল ইরানিদের কাছে একটি বার্তা দিয়েছিল। বার্তাটিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে , শাসনব্যবস্থার কিছু সদস্য ইসরায়েলকে অনুরোধ করছেন যেন ইরানকে আরেকটি গাজা বা লেবাননে পরিণত না করা হয়। এতে ফারসি ভাষায় লেখা ছিল :‘আমরা বুঝতে পারি যে শাসক গোষ্ঠীর আরোপিত শর্তে আপনি একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে আমরা আমাদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছি যারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়ে ভীত।’
ইরানি ভাষায় দেওয়া বার্তাটিতে আরো বলা হয়, ‘ইরানে যা ঘটছে তাতে এমনকি শাসকগোষ্ঠীর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সদস্যরাও ভয়, হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং গাজা ও লেবাননের মতো একই পরিণতি এড়াতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আমাদের অনুরোধ করছে। তবে, আমাদের স্পষ্ট করে বলতে হবে যে আমরা এই ধরনের অনুরোধের ঠিকানা না এবং আমরা আপনাকে মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিচ্ছি। সম্ভবত আপনি আপনার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য একটি উপায় খুঁজে পাবেন।’ মোসাদের একটি লিংক দেওয়া হয়েছিল, যেখানে একটি সুরক্ষিত এবং এনক্রিপ্ট করা সংযোগ (ভিপিএন) ব্যবহার করার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল। মোসাদ এই বার্তার জবাবে তাদের নিজস্ব একটি টুইট করেছে :ইরান দাবি করেছে যে তারা মোসাদের একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ভাগ্যক্রমে, কেউ সেখানে ছিলেন না, সবাই ইরানে আছেন।