‘বাংলাদেশি ভাষার’ অনুবাদক খুঁজছে দিল্লি পুলিশ, মমতার প্রতিবাদ

দিল্লি পুলিশ ‘বাংলাদেশি ভাষার’ অনুবাদক চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছে- এরকম একটি চিঠি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রোববার (৩ আগস্ট) রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী তার আনুষ্ঠানিক 'এক্স' হ্যান্ডেলে দিল্লি পুলিশের লেখা ওই চিঠিটি পোস্ট করেন।

দিল্লি পুলিশ ঠিক কবে এ চিঠিটি পাঠিয়ে তা জানা যায়নি, তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে যে জুলাই মাসের ২৪ তারিখ ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

ওই চিঠিতে দিল্লির লোদী কলোনী থানা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রেসিডেন্ট কমিশনারের’ দপ্তর- বঙ্গ ভবনে জানিয়েছেন যে, তারা আটজন 'প্রবল ভাবে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিককে' আটক করেছেন। তাদের কাছ থেকে এমন কিছু পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, যেগুলো 'বাংলায়' লেখা এবং তার হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদ করা দরকার। এই কাজের জন্যই ‘বাংলাদেশি ভাষায় পারদর্শী একজন সরকারি অনুবাদক’ পাঠানোর জন্য দিল্লির বঙ্গ ভবনকে অনুরোধ করেছেন ওই থানার ওসি।

এই চিঠি ভাইরাল হওয়ার পরেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও খুব স্বাভাবিকভাবেই এসেছে।

বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেন, এমন একটি সংগঠন ‘বাংলা পক্ষ’ বলছে, হিন্দি বলয়ের মানুষদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিকৃত একটা ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু দিন ধরে, যে বাংলাটা বাংলাদেশের ভাষা, ভারতের নয় এবং যারা বাংলা বলেন তারা সবাই বাংলাদেশি। একই সঙ্গে হিন্দিকে ভারতের 'জাতীয় ভাষা' বলে ভ্রান্ত প্রচারণাও আছে ব্যাপক ভাবেই। সেই মানসিকতারই প্রতিফলন দেখা গেছে পুলিশের এই চিঠিতে।

বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলে অভিহিত করার ঘটনাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, ‘কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশ-বিরোধী, অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করেছেন।

মমতা ব্যানার্জীর এই মন্তব্যের জবাবে বিজেপি নেতারাও পাল্টা মন্তব্য করছেন।

রাজ্য বিজেপির আনুষ্ঠানিক 'এক্স' হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে- ‘এখন টিএমসি আপত্তিজনক দাবি তুলেছে যে এটা 'আমাদের ভাষার অপমান'। ঘটনা হল তাদের সম্পূর্ণ ক্ষোভের মূলে আছে বাংলাদেশিদের রক্ষা করা। ভারতী এবং ভারতীয় বাঙালিদের এর সঙ্গে কী সম্পর্ক আছে? পরিষ্কার করে দেওয়া দরকার- তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে কি ব্যাপকভাবে উর্দু প্রভাবিত উপভাষা- যেটা অবৈধ অভিবাসীরা ব্যবহার করে, সেটাই কি আসল বাংলা ভাষা? তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতি এখানে এসে পৌঁছিয়েছে- যে ভারতীয় পরিচয়ের ক্ষতি করে বিদেশি নাগরিকদের পক্ষ নিতে হচ্ছে?’ 

উল্লেখ্য, পেহেলগামে বন্দুকবাজদের হামলার পর থেকেই দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, আসাম এবং ওড়িশার মতো রাজ্যে কয়েক হাজার বাংলা-ভাষাভাষীকে 'অবৈধ বাংলাদেশি' সন্দেহে আটক করে রাখা হয় এবং এদের কোনো আদালতে হাজিরও করা হয় নি। এদের মধ্যে অনেককে বাংলাদেশে 'পুশ' অথবা ঠেলে দেওয়া হয়।

তাদের অনেকের ভারতীয় নাগরিক পরিচয় যাচাই করার পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তারা ভারতীয় বাংলাভাষী, এদের অনেককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এদের হেনস্থা অব্যাহত রয়েছে।