যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশে সরাচ্ছে ভারতের পোশাক কারখানা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার পর থেকেই সংকটে পড়েছে ভারতের পোশাক খাত। এই সিদ্ধান্তের বড় ধাক্কা লেগেছে মার্কিন ক্রেতা নির্ভর ভারতীয় পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবালের ওপর। প্রতিষ্ঠানটি গ্যাপ ও কোলসের মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক সরবরাহ করে।

ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির পর যুক্তরাষ্ট্রের এসব ক্রেতা নিয়মিত ফোন করে চাপ দিচ্ছে—পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কভার যেন ভারতীয় কোম্পানিগুলো নেয় অথবা উৎপাদন ভারতের বাইরে সরিয়ে নেয়। এমন পরিস্থিতিতে পার্ল গ্লোবাল ইতোমধ্যেই তাদের উৎপাদন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালায় থাকা নিজস্ব ১৭টি কারখানায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রায় সব মার্কিন ক্রেতা চাইছে, আমরা যেন উৎপাদন ভারতে না রেখে অন্য দেশে স্থানান্তর করি।

২০২৫ সালের এপ্রিলেই প্রথমবারের মতো পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। শুরুতে ভারতের জন্য শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কম থাকায় পোশাক রপ্তানির বাজারে ১৬ বিলিয়ন ডলারের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল আমদানির কারণে পরে আরও ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, ফলে ভারতের পোশাক পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় এই হার অনেক বেশি। 

শুধু পার্ল গ্লোবাল নয়, ভারতের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান কম খরচের বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে নেপাল ও ইথিওপিয়ার নাম বিবেচনা করছে। তবে এই ধারা ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির জন্য এক বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশটির পোশাক খাত আগে থেকেই শ্রমিক ঘাটতি ও সীমিত উৎপাদন সক্ষমতায় ভুগছে। তার ওপর শুল্কের চাপ এবং মার্কিন ক্রেতাদের চাপাচাপিতে অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে।

যেসব প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র ভারতের অভ্যন্তরের কারখানার ওপর নির্ভরশীল, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রিচাকো এক্সপোর্ট, যারা ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ কোটি ১০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে এবং যাদের সব পণ্য ভারতের অভ্যন্তরের দুই ডজন কারখানায় তৈরি হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীনেশ রাহেজা বলেন, আমরা কাঠমান্ডুতে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র খোলার বিষয়টি বিবেচনা করছি। ভারতের পোশাক খাত কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে।