হাসিনা-ইউনূসের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ‘বলির পাঠা’ হয়েছি: টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি মামলায় তিনি ‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলির পাঠা’। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ জানিয়েছেন, মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন তিনি।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের চিফ রিপোর্টার ড্যানিয়েল বফিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন টিউলিপ। রোববার (১০ আগস্ট) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে দ্য গার্ডিয়ান।

৪২ বছর বয়সী এই লেবার পার্টির নেত্রী জানান, তিনি গত সপ্তাহে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন, ঢাকার পূর্বাচলে জমি বরাদ্দে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে তাকে ও আরও ২০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার শুনানি ১১ আগস্ট ধার্য করা হয়েছে।

তবে টিউলিপ জানিয়েছেন, তিনি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি এবং অভিযোগপত্রও দেখেননি। তার ভাষ্যে, ‘আমি যেন এক অদ্ভুত দুঃস্বপ্নের মাঝে আটকে আছি, যেখানে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে কিন্তু আমি জানি না আমার বিরুদ্ধে আসল অভিযোগ কী।’

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় প্রয়োজনে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার হতে পারে।

টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে লেবার পার্টির নির্বাচনি জয় লাভের পর তিনি অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং তার কাজ উপভোগ করছিলেন। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে শেখ হাসিনার সরকার পতন হয়। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর অর্থনীতিবিদ ও হাসিনার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শুরু হয়।

প্রথমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, যা টিউলিপ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। পরে ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার অভিযোগও আসে, যা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।

নিরাপত্তাজনিত কারণে অন্য কারো মালিকানাধীন বাড়িতে থাকার প্রসঙ্গ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছেন টিউলিপ। তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের নীতিগত আচরণবিধি পর্যালোচনার স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তার আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখে অভিযোগ থেকে তাকে মুক্তি দেন।

টিউলিপ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ‘নোংরা রাজনীতি’ তার ওপর চালানো হচ্ছে। তার কথায়, ‘এটি মুহাম্মদ ইউনূস ও আমার খালা শেখ হাসিনার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলাফল, আর আমি এর বলি হয়েছি। বাংলাদেশে যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত, কিন্তু আমি তাদের মধ্যে নই।’

সিদ্দিক জানান, তিনি যুক্তরাজ্যে সফরকালে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে, যুক্তরাজ্যের অপরাধ দমন সংস্থা শেখ হাসিনা-সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির প্রায় ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করেছে, যার একটিতে মা বসবাস করতেন। টিউলিপ বলেন, এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান