বৈঠকে উভয়পক্ষে অংশ নিয়েছেন তিনজন করে, উদ্বিগ্ন ইউক্রেনীয়রা

আলাস্কার এলমেনডর্ফ–রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টা) তাদের এই বৈঠক শুরু হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎও এটাই প্রথম।

সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধই এই সাক্ষাতের প্রধান লক্ষ্য। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়াবিষয়ক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অংশ নিয়েছেন। অপরপক্ষে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং রুশ প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১১টার আগে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ২৬ মিনিটে) মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ান আলাস্কার এলমেনডর্ফ–রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে অবতরণ করে। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বহনকারী বিমান অবতরণ করে।

দুই প্রেসিডেন্টই একই সময় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার পর) বিমান থেকে অবতরণ করেন। তারা দুজনই লালগালিচা দিয়ে হেঁটে পরস্পরের কাছে এসে করমর্দন করেন

এইদিকে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আপনাকে এখনই সেটা বলতে পারব না। আমি জানি না, এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আমি কিছু বিষয় চাই। আমি যুদ্ধবিরতি দেখতে চাই।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজই এটা (যুদ্ধবিরতি) হতে যাচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। কিন্তু আজ এটা না হলে আমি খুশি হচ্ছি না। প্রত্যেকে বলেছিল, আজ এটা (যুদ্ধবিরতি) হতে পারে না, কিন্তু আমি শুধু বলছি, আমি চাই হত্যাকাণ্ড বন্ধ হোক।’

হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য আলোচনায় এসেছেন জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কোনো টাকা খরচ করছি না। আমরা টাকা উপার্জন করছি। তারা আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে, আমরা সেগুলো ন্যাটোতে পাঠাচ্ছি এবং ন্যাটো আমাদের বড় ও আকর্ষণীয় চেক পাঠাচ্ছে।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে–যায় না।…আমি যা নিয়ে চিন্তিত, সেটা হলো গত সপ্তাহে তারা ৭ হাজার ১১ জনকে হারিয়েছে। যাদের প্রায় সবাই সৈনিক। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একটি শহরে ৩৬ জন মারা গেছে। সাত হাজারের বেশি বেশি সেনা! এটা পাগলামো।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বৈঠক ঘিরে মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করছেন ইউক্রেনের বাসিন্দারা।

আল জাজিরার প্রতিবেদক কথা বলেন কিয়েভভিত্তিক ক্রিমিয়ান তাতার শিল্পী এবং সিরামিস্ট রুস্তেম স্কাইবিন সঙ্গে।  রুস্তেম স্কাইবিন জানান, পুতিন এবং ট্রাম্প যখন সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তিনি বিভিন্ন ধরণের আবেগ অনুভব করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার অনুভূতি খুবই মিশ্র। একদিকে এটা ভীতিকর। কারণ ইউক্রেনের পক্ষে কেউ উপস্থিতি ছাড়া এই আলোচনা থেকে কী আশা করা যায়- তা আপনি জানেন না। হয় তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে, নয়তো কেবল দেখা করবে। যদি তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, তাহলে তারা যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের এটি তৃতীয় বছর। আপনি এই অসহায়ত্বের অনুভূতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এটি আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। উদাসীনতার অনুভূতি দেখা দেয়। যদিও এটি এমন হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবতা তার নিজস্ব নিয়ম নির্ধারণ করে। আবেগগুলি খুবই বিতর্কিত। দেখা যাক কী হয়। তবে আশাবাদ যথেষ্ট নয়।’