বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে একটি আবেদন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরবিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট। যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে ওই আবেদন ও জবাব প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিষয়টি পার্লামেন্টে ওঠে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় সংসদীয় এলাকা ওকিংয়ের বাসিন্দাদের পক্ষে হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশ নিয়ে আবেদন দায়ের করা হয়। ওই এলাকার পার্লামেন্ট সদস্য উইল ফরস্টার আবেদনটি উত্থাপন করেন। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও দমন-পীড়নের ঘটনার খবর বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান সহিংস অপরাধ, ধর্মীয় উগ্রবাদ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ, জনসমক্ষে নারীদের হয়রানি এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
যুক্তরাজ্য সরকার যেন বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করে, সেই আহ্বান জানাতে হাউস অব কমন্সের প্রতি অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে। একই সঙ্গে হাউস অব কমন্সের প্রতি অনুরোধ করা হয়, তারা যাতে যুক্তরাজ্য সরকারকে চাপ দেয়, যেন আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘকে একটি তদন্ত পরিচালনার জন্য বলা হয়। যে তদন্তে সম্ভাব্য দমন–পীড়ন, দেশের আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হওয়া এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর এর বৃহত্তর প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করা হবে।
এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষণ দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ক্যাথেরিন ওয়েস্ট। তিনি বলেন, ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারের প্রসার ও সুরক্ষার প্রতি দীর্ঘদিনের অঙ্গীকার রয়েছে যুক্তরাজ্যের। গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারবিষয়ক দূত এলিনর স্যান্ডার্স বাংলাদেশ সফর করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও মৌলিক স্বাধীনতাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া ২০২৪ সালের নভেম্বরে মন্ত্রী ওয়েস্ট তার সর্বশেষ সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করেন।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘গত গ্রীষ্মের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে আমন্ত্রণ জানানোয় আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করি। আমরা বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহত সহযোগিতাকে উৎসাহিত করি।’
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ‘টেকসই গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি, সুশাসন উন্নত করা এবং একটি সক্রিয় সুশীল সমাজের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাজ্য অব্যাহতভাবে ঐকমত্য তৈরি ও সংস্কারপ্রক্রিয়ার পক্ষে। নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিসরকে সমর্থন, দুর্নীতি হ্রাস ও সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য আমরা “বাংলাদেশ কোলাবোরেটিভ, অ্যাকাউন্টেবল অ্যান্ড পিসফুল পলিটিকস প্রোগ্রাম”-এর মাধ্যমে ২ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডের মতো (৪৪ কোটি টাকার বেশি) ব্যয় করছি।’