ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল লাদাখের রাজধানী লেহ’তে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৫৯ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জনই পুলিশ-কর্মী। এরপর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে কারফিউ জারি করেছে।
অঞ্চলটিকে আলাদা রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া এবং ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভে অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কর্মী সোনম ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেছে সরকার। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
বিক্ষোভে পুলিশের গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে এবং লাদাখের সঙ্গে সংহতি জানাতে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ওই অঞ্চলের কারগিল শহরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কোথাও চারজনের বেশি মানুষ জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
পাহাড়ি মরুভূমি লাদাখে মুসলিম-বৌদ্ধ মিশ্র জনসংখ্যা রয়েছে। ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং লাদাখের আধা-স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়। প্রায় ৩ লাখ মানুষের জনবহুল লাদাখ চীন ও পাকিস্তানের সীমানায় অবস্থিত। লেহ অঞ্চলে প্রধানত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বসবাস, যারা কয়েক দশক ধরে আলাদা অঞ্চল দাবি করে আসছে।
এদিকে মুসলিম অধ্যুষিত কারগিল জেলা ঐতিহাসিকভাবে চেয়েছিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সঙ্গে একীভূত হতে। কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে উভয় সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে লাদাখের রাজ্য মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং চাকরি ও ভূমির কোটাসহ বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে।
কীভাবে বুধবারের (২৪ সেপ্টেম্বর) সহিংসতা ছড়ালো তা স্পষ্ট নয়। কয়েক মাস ধরেই মাঝে মাঝে বিক্ষোভ হচ্ছিলো এবং রাজ্য মর্যাদা দাবিতে সমর্থন বাড়ছিল। তবে বুধবারের সহিংসতা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। বুধবার গভীর রাতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ওয়াংচুককে দোষারোপ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়। এতে অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্যকে আহত হয়।
সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে যাতে অন্তত অর্ধ-শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হন। এর মধ্যে চারজন গুরুতর আহত হয়ে পরে মারা যান।
লাদাখ বৌদ্ধ সমিতির প্রধান চেরিং দর্জে লাকরুক বলেন, লাদাখের তরুণরা সহিংসতার বিপক্ষে। তবে তারা ভীষণ হতাশ। কারণ সরকার বারবার সংলাপ প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিচ্ছে এবং অঞ্চলে বেকারত্ব চরম আকার ধারণ করেছে।
চীনের সঙ্গে সীমান্তবিষয়ক বিতর্কিত অঞ্চলসহ লাদাখে ভারতের বিপুল সেনা উপস্থিতি রয়েছে।
২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় ও চার চীনা সেনা নিহত হয়েছিল।
লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দ্র গুপ্তা, (কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োজিত প্রশাসনিক প্রধান) বলেন, সহিংসতার তদন্ত শুরু হয়েছে। গত দুই দিন ধরে মানুষকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আর এখানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভকে বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। সূত্র: রয়টার্স