জাতিসংঘের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্থগিত করলো ইরান

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর ইরনার।

রোববার (১২ অক্টোবর) ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘আমরা আইএইএ-এর সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছি। জাতিসংঘ যদি এমন কোনো প্রস্তাব দেয়, যা ইরানের অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হয়- তাহলে আমরা আবার চুক্তিতে ফিরে যাবো।’

১৯৬৮ সালে ইরান আইএইএ-এর সঙ্গে ‘নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি’ (এনপিটি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সে সময় দেশটির শাসনক্ষমতায় ছিলেন শাহ রেজা পাহলভী। চুক্তির আওতায় ইরান প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা কখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না এবং পরমাণু কার্যক্রমে আইএইএ-কে সহযোগিতা করবে।

তবে চলতি বছরের জুন মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের পর থেকে আইএইএ-এর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। ৬ জুন আইএইএ এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানের কাছে বর্তমানে ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যার বিশুদ্ধতার হার ৬০ শতাংশ। এটি ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হলে তা দিয়ে সহজেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি সম্ভব।

আইএইএ-এর এই বিবৃতি প্রকাশের ঠিক এক সপ্তাহ পর, ১২ জুন রাতে ইরানে ‘দ্য রাইজিং লায়ন’ নামের সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। অভিযানের কিছুক্ষণ পর এক ভিডিওবার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার বিবৃতিকে আমলে নিয়েই এ অভিযান চালানো হয়েছে।

টানা ১২ দিন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলে, যার শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রও তাতে যুক্ত হয়। এই সংঘাতে ইরানের সেনাপ্রধানসহ সামরিক বাহিনীর একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অন্তত ১২ জন জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। পাশাপাশি, দেশটির একাধিক পরমাণু স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

তবে সেই ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের অবস্থান এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জাতিসংঘ জানায়, তারা জানে না ইউরেনিয়ামগুলো কোথায় রাখা হয়েছে।

সংঘাত শেষ হওয়ার পর আইএইএ ইরানের সঙ্গে সংলাপের আগ্রহ প্রকাশ করে এবং তেহরান সফরেরও প্রস্তাব দেয়। তবে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংলাপের জন্য তারা প্রস্তুত, কিন্তু আইএইএ-এর প্রতিনিধিরা এলেও ইরান তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলো দেখাতে বাধ্য নয়।

পরবর্তীতে গত সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বৈঠকে ইরানকে জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নিতে আহ্বান জানান। কিন্তু ইরান নিজের অবস্থানে অনড় থাকায় সে আহ্বান ব্যর্থ হয়।

বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে জাতিসংঘ ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।