কোন দিকে যাচ্ছে বিশ্বের অর্থনীতি। আর কোন পথেই বা চলতে শুরু করেছে বিশ্ব রাজনীতি। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পেট্রোডলার চুক্তি আর সম্প্রসারণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মাথায়।
সৌদি আরব দীর্ঘ পাঁচ দশকের পথ চলা ছিন্ন করলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। ফলে দেশটি এখন থেকে তেলসহ অন্যান্য পণ্য মার্কিন ডলারের পরিবর্তে অন্যান্য মুদ্রাতেও বিক্রি করতে পারবে। ওইসব মুদ্রার মধ্যে রয়েছে চীনা ইউয়ান, ইউরো, ইয়েন ইত্যাদি। লেনদেনের ক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারে ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৮০ বছর মেয়াদের পেট্রোডলার চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। গত ৯ জুন সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ১৯৭৪ সালের ৮ জুন স্বাক্ষরিত এ চুক্তি বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এ চুক্তি স্বাক্ষরের পর একটি দুটি যৌথ কমিশন গঠন করা হয়-একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে, অপরটি সৌদি আরবের সামরিক চাহিদার ভিত্তিতে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত পেট্রোডলার ব্যবস্থা থেকে বলতে গেলে সরেই এল সৌদি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটি সৌদি আরবের নতুন সিদ্ধান্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে প্রায় সব দেশই গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডকে তাদের মুদ্রামান নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের ঔপনিবেশিক দেশগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং সে সময় পৃথিবীর মোট সোনার দুই-তৃতীয়াংশ রিজার্ভ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। কাজেই বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপকে পুনর্গঠনের সময় ব্রেটন উডস চুক্তি ও আইএমএফ-এর কল্যাণে ডলারভিত্তিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্র গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড তুলে দেয়, ফলে কার্যত পৃথিবী নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মার্কিন ডলারের ওপর। ১৯৭৩ সালে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একমাত্র ডলারেই তেল বিক্রি করতে সম্মত হয়, যা ১৯৭৫ সালের মধ্যে অন্যান্য ওপেক দেশও মেনে নেয়। ফলে বৈশ্বিক তেল আমদানি রপ্তানি হয়ে পড়ে পেট্রোডলারনির্ভর।
এখন সৌদি পেট্রোডলার চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মার্কিন ডলারকে পাশ কাটিয়ে অন্যান্য মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন করার প্রবণতা বাড়তে পারে।
সৌদি আরবের পেট্রোডলার চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহে বড় পরিবর্তনের শুরু বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক খাতে এ সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ প্রভাব কেমন হবে, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব বিশ্ব অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির গতিপথ পাল্টে দিলো না নিজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো ফাঁদে পা দিলো সেটা বুঝতে আরো কিছু সময় লাগবে। তবে এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে নতুন একটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে।