হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় গাজার বাসিন্দারা সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে গাজার উত্তরে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে ইসরাইল। খবর আল জাজিরা
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৭টা (স্থানীয় সময়) থেকে গাজাবাসীদের হেঁটে উত্তরাঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
এ খবর পাওয়ার পর তীব্র শীত উপেক্ষা করেই স্থানীয় সময় ভোর ৫টার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রবেশপথগুলোর সামনে জড়ো হয়ে যায়। গত ১৫ মাস ধরে যে নৈরাশ্য তাদের ঘিরে রেখেছিল তা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন তারা।
গাজার উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিজ নিজ এলাকায় ফেরার মুহূর্তটিকে ‘স্বপ্ন সত্যি হওয়া’ বলে বর্ণনা করেছেন। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনদের স্বাগত জানান। তারা তাদের জন্য পানি ও খাবার নিয়ে আসেন আর পরস্পর কোলাকুলি করতে থাকেন।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজার উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের ফেরার ঘটনাটিকে ফিলিস্তিনিদের ‘একটি বিজয়’ এবং ইসরায়েলিদের পরাজয় বলে বর্ণনা করেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, যেখান থেকে তাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল সেখানে ফিলিস্তিনিদের ফেরা তাদের ভূমির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিশ্চিত করেছে এবং আরেকবার ‘দখলদারদের ব্যর্থতা’ প্রমাণ করেছে। বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে দখলদাররা তাদের ‘আক্রমণাত্মক লক্ষ্য অর্জন করতে’ ও ফিলিস্তিনিদের অবিচল মনোভাব ‘ভাঙতে চেয়েছিল’, কিন্তু তারা সফল হয়নি।
১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা সিটিসহ গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ বেসামরিক বাড়িই ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেককে তাদের স্বজনদের মৃতদেহ বের করে আনার জন্য সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই খোঁড়াখুঁড়ি করতে হতে পারে।
যুদ্ধের প্রায় শুরুর দিকে যে ১৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে হুমকির মুখে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফেরা সব ফিলিস্তিনির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বে, ৩৩ জন বন্দি ছয় সপ্তাহের মধ্যে মুক্তি পাবেন, আর এর বিনিময়ে প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি যাদের ইসরাইলি কারাগারে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি হবে।
সর্বশেষ বন্দি-বিনিময়ে শনিবার ৪ জন ইসরাইলি নারী বন্দি, যাদের সবাই সেনা সদস্য, এবং ২০০ জন বন্দি, প্রায় সবাই ফিলিস্তিনি, মুক্তি পেয়েছেন। এটি ছিল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বিতীয় বন্দি -বিনিময়।
যুদ্ধবিরতির ফলে গাজায় খাদ্য, তেল, ওষুধ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী এসেছে, তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে যে 'মানবিক পরিস্থিতি এখনও গুরুতর।'
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ২৫১ জন অপহৃত হলেও, তাদের মধ্যে ৮৭ জন এখনও গাজায় রয়েছে, যার মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
ইসরাইলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী হামাসের হামলায় ১,২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক।
ইসরাইলের পাল্টা আক্রমণে গাজার ৪৭,৩০৬ জন নিহত হয়েছেন, বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে।