লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বেন্ত জবেইল শহরে ইসরায়েলের চালানো ড্রোন হামলায় একই পরিবারের তিন শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন মার্কিন নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও অন্তত দুজন। নিহতদের মধ্যে থাকা শিশুরা- সেলিন, হাদি ও আসিল- তাদের পিতা এবং মা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। হামলায় শিশুদের মা আহত হয়েছেন।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, রোববারের এ হামলায় একটি মোটরসাইকেল ও একটি গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। হামলার সময় পরিবারের সদস্যরা নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন বলে জানা গেছে।
ইসরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, হিজবুল্লাহর একজন সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। তবে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির বিষয়টিও তারা স্বীকার করেছে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন লেবাননের শীর্ষ নেতারা। পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরি প্রশ্ন তোলেন, লেবাননের শিশুরাই কি ইসরায়েলের জন্য অস্তিত্ব সংকট তৈরি করছে? নাকি বিনা জবাবদিহিতায় বেসামরিক মানুষ হত্যা করাই আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আসল হুমকি?
প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম এই হামলাকে নতুন হত্যাযজ্ঞ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি একটি নৃশংস অপরাধ। দক্ষিণে নিজ গ্রামে ফিরে আসা মানুষদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের এই হামলার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানান।
শ্রমমন্ত্রী মোহাম্মদ হায়দার অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে দক্ষিণাঞ্চলে ফিরে আসা সাধারণ মানুষদের টার্গেট করছে। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা সফল হবে না, কারণ দক্ষিণের মানুষের ইচ্ছাশক্তি অপরাধীর শক্তির চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবাননে হামলা অব্যাহত রয়েছে। তেলআবিবের দাবি, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ যাতে পুনরায় সামরিক শক্তি গড়ে তুলতে না পারে, সেজন্য তারা এই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে লেবানন সেনাবাহিনী সরকারকে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। তবে হিজবুল্লাহ জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকলে তারা অস্ত্র পরিত্যাগ করবে না।
এ হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিহত শিশুদের মার্কিন নাগরিকত্ব থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।