অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা আগ্রাসনে নতুন করে আরও ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় চালানো হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০৪ জন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ২৮৩ জনে এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৫ জন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় উদ্ধার হওয়া মৃতদের মধ্যে চারজনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে পাওয়া গেছে। বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা নিরাপত্তার অভাবে সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না। সামরিক হামলার পাশাপাশি গাজার সাধারণ জনগণ মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়েও প্রাণ হারাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৫ জন। আহত হয়েছেন ২৪ জন। এ নিয়ে শুধু সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২,৫২৩ ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ১৮,৪৭৩ জনের বেশি।
ইসরায়েলি অবরোধ ও ত্রাণের ঘাটতিতে গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪ জনের, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। গণনা অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪০ জন এর মধ্যে ১৪৭ জন শিশু।
জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা আইপিসি (IPC) গত মাসেই গাজাকে দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চল ঘোষণা করেছিল। তার পর থেকে এই দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬২ জন, এর মধ্যে ৩২টি শিশু।
গত ১৮ মার্চ, যুদ্ধবিরতির মাঝে নতুন করে ইসরায়েল সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে একক এই অভিযানে নিহত হয়েছেন ১২,৭২৪ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ৫৪,৫৩৪ জনের বেশি। এটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সরাসরি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার গাজায় হামলা বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে প্রতিবারই এই আহ্বান উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
বিশ্ব আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইতোমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আধুনিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হতে চলেছে।