স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারবিষয়ক একটি বিল অনুমোদন দিয়েছে ফ্রান্সের আইনসভার নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ। এ পদক্ষেপকে দেশটিতে সংশ্লিষ্ট আইন পাসের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় পরিষদে এক ভোটাভুটিতে ৩০৫ জন আইনপ্রণেতা বিলটির পক্ষে ভোট দেন, বিপক্ষে ভোট দেন ১৯৯ জন।
নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে একজন রোগী নিজে বা চিকিৎসা সহায়তাকারীর মাধ্যমে তার জীবনের অবসান ঘটানোর অনুমতি পাবেন—এমন প্রস্তাব রাখা হয়েছে বিলটিতে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বিলে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও রক্ষণশীল কয়েকটি গোষ্ঠী বিলটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বিলটিতে অনুমোদন দেওয়ার প্রশংসা করে একে ভ্রাতৃত্বের চেতনার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন মাখোঁ।
মাখোঁ পোস্টে লেখেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার (রোগীর যন্ত্রণাহীন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা) ও সহায়তার মাধ্যমে মৃত্যুবিষয়ক আইন উন্নয়নের প্রস্তাবে জাতীয় পরিষদের ভোট এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
পরবর্তী আলোচনার জন্য বিলটি এখন আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটে পাঠানো হবে। ফ্রান্সের দীর্ঘ ও জটিল পার্লামেন্টারি প্রক্রিয়ার কারণে এ বিলের ওপর চূড়ান্ত ভোটের সময় নির্ধারণে কয়েক মাস লাগতে পারে। তবে উভয় কক্ষ একমত হতে না পারলে সিনেটকে উপেক্ষা করে জাতীয় পরিষদ নিজেই কোনো বিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
তবে আইন পাসের প্রক্রিয়া যত জটিল বা সময়সাপেক্ষই হোক, বিলটি শেষ পর্যন্ত আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, জরিপে দেখা গেছে, ফ্রান্সের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এমন আইনকে সমর্থন করেন, যা মারাত্মক অসুস্থ বা দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণায় ভোগা রোগীদের স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার দেয়।
প্রস্তাবিত বিলে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে সহায়তাপূর্ণ মৃত্যু ঘটাতে প্রাণঘাতী ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা রয়েছে। শর্তপূরণ সাপেক্ষে কোনো রোগী নিজে থেকে ওষুধ নিতে বা যদি শারীরিক অবস্থার কারণে নিজে নিতে না পারেন, তবে চিকিৎসক বা নার্সের সাহায্য নিতে পারবেন।
স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার পেতে রোগীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের ওপর এবং তাকে ফ্রান্সের নাগরিক বা ফ্রান্সে বসবাসকারী হতে হবে বলে বিলে উল্লেখ করা আছে।
এ ছাড়া শর্তে বলা আছে, পেশাদার একদল চিকিৎসাকর্মীকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে রোগীর অবস্থা গুরুতর, তিনি রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছেন, চিকিৎসায় রোগ ভালো হওয়ার আর আশা নেই, চিকিৎসা না থাকায় রোগী অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন এবং সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় প্রাণঘাতী ওষুধ গ্রহণ করতে চাইছেন।
রোগী গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত ও আলঝেইমারের মতো স্নায়ুক্ষয়জনিত ব্যাধিতে ভোগা ব্যক্তিরা এ আইনের আওতায় যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। তাই এ ধরনের ব্যক্তিরা স্বেচ্ছামৃত্যুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য একজন ব্যক্তি নিজেই প্রাণঘাতী ওষুধ পাওয়ার অনুরোধ করবেন এবং এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তার জন্য নির্ধারিত সময় পার হলে অনুরোধ পুনরায় নিশ্চিত করবেন।
অনুমোদন পাওয়া গেলে একজন চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে প্রাণঘাতী ওষুধ দেবেন, যা বাসা, নার্সিং হোম বা কোনো চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করা যাবে।