একে অন্যের প্রশংসায় ভাসলেন ট্রাম্প-মামদানি

প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বিরোধের দুই মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মধ্যে বৈঠক হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) হোয়াইট হাউসে প্রথমবার মুখোমুখি বৈঠক করেছেন তারা। 

দীর্ঘ সময় ধরে চলা তীব্র রাজনৈতিক সমালোচনা ও বিরোধিতার পর দুই নেতাই এই বৈঠকে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, তিনি (মামদানি) যত ভালো করবেন, আমি তত খুশি হব। আমরা তাকে ভালো কাজ করতে সাহায্য করব।

তিনি আরও বলেন, তার অনেক ধারণা আমার ধারণার সঙ্গে মিলে যায়। আমরা অনেক বিষয়ে একমত, যা আগে ভাবিনি।

মামদানি আগামী ১ জানুয়ারি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্ককে আরও সাশ্রয়ী ও বাসযোগ্য করার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছি।’

এর আগে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় মামদানিকে গ্রেফতার ও দেশ থেকে তাড়ানোর হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। অন্যদিকে মামদানিও ট্রাম্পকে ‘স্বৈরশাসকের মতো আচরণ’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। ট্রাম্প বারবার তাকে ‘কমিউনিস্ট’ বলেও আক্রমণ করেছিলেন।

ট্রাম্প ও মামদানির মধ্যে কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছিল। এই সময়ে তারা পরস্পরকে বাক্যবাণে জর্জরিত করছেন, পাল্টাপাল্টি অপমান ও অভিযোগ করেছেন। কিন্তু স্থানীয় সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউসে নিজেদের প্রথম সরাসরি বৈঠকটি তারা অত্যন্ত সফলভাবে শেষ করেছেন। তারা ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। একে অন্যের প্রশংসাও করেছেন। নিউইয়র্ক শহরের অপরাধ দমন ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ট্রাম্প ও মামদানি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিরোধী মতাদর্শ ও ভিন্ন প্রজন্মের মানুষ। রিপাবলিকান দলের ট্রাম্প একজন ধনকুবের।ডেমোক্র্যাট সোশ্যালিস্ট মামদানি মধ্যবিত্ত পরিবারের এক সন্তান। মামদানি তরুণ। অভিবাসন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক নীতি পর্যন্ত প্রায় সব বিষয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু প্রথম বৈঠকে তাদের মধ্যে সখ্যতা দেখা গেছে।

হোয়াইট হাউসের বৈঠকে একপর্যায়ে ৩৪ বছর বয়সী মামদানি ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্পের টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তখন নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়রের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প হাসেন। তার হাত চাপড়ে দেন। অথচ কিছুদিন আগেও ট্রাম্প মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলেছেন। ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছেন।

মামদানির সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও অনেক বেশি বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক জায়গায় আমরা একমত: আমরা চাই আমাদের এই প্রিয় শহরটি খুব ভালো থাকুক।’

চলতি বছরের শুরুতে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে কয়েকজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিব্রত বা ভর্ৎসনা করেছেন ট্রাম্প। মামদানির সঙ্গেও এমন কিছু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু তেমন কিছু তো হয়নি, বরং উল্টো হয়েছে। তবে শুক্রবার বৈঠকের আগেই ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মামদানির সঙ্গে তার ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ’ বৈঠক হতে চলেছে।

ট্রাম্প ও মামদানি নিউইয়র্কের দুই প্রজন্মের প্রতিনিধি। শুক্রবারের বৈঠক শেষে তারা নীতি-বিষয়ক কোনো ঘোষণা দেননি। কিন্তু বৈঠকের পর তারা অপ্রত্যাশিতভাবে রাজনীতিতে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সাংবাদিকদের মামদানি বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে আছে। কিন্তু আমাদের বৈঠকে সেসব বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়নি। বরং নিউইয়র্কবাসীর সেবা করার যে সাধারণ লক্ষ্য আমাদের আছে, তাকে কেন্দ্র করেই মূলত আমরা আলোচনা করেছি। (এমন একটি বৈঠকের জন্য) আমি প্রেসিডেন্টের সত্যিই খুব প্রশংসা করি।

সূত্র: রয়টার্স ও সিবিএস নিউজ