ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই বাতাসের মানের অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণের ঘটনায় সেখানকার সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কার্যক্রম ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাকি কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
মূলত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা কার্যকর করার পর সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মীদের বড় অংশকে ঘরে বসে কাজের নির্দেশ দেয় দিল্লি সরকার।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বায়ুদূষণ আরও তীব্র হওয়ায় সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি অফিসের কর্মীদের ৫০ শতাংশকে ঘরে বসে কাজ (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) করার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার।
শনিবার থেকে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (গ্র্যাপ)–এর চতুর্থ ধাপ বা স্টেজ-৪ কার্যকর হওয়ায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর গ্র্যাপ-৩ কার্যকর হলে একই ধরনের নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। তবে ওই মাসের শেষ দিকে গ্র্যাপ-৩ প্রত্যাহার করা হলে সেই নির্দেশও তুলে নেয়া হয়।
এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সংস্থা কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (সিএকিউএম) শনিবার বিকেলে দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় গ্র্যাপ-৩-এর বিধিনিষেধ কার্যকর করে। তবে একই সন্ধ্যায় বায়ুর মান আরও খারাপ হওয়ায় তা বাড়িয়ে গ্র্যাপ-৪ করা হয়।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শনিবার বিকেল ৪টায় দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) রেকর্ড করা হয় ৪৩১। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪১-এ।
এক বিবৃতিতে সিএকিউএম জানায়, ‘বায়ুমানের বর্তমান প্রবণতা বিবেচনায় নিয়ে এবং এই অঞ্চলের মাতাসের মানের আরও অবনতি রোধের লক্ষ্যে গ্র্যাপ-সংক্রান্ত সাব-কমিটি বিদ্যমান গ্র্যাপের স্টেজ-৪ অনুযায়ী পুরো জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিআর)-এ সব ধরনের ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এদিকে সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লির হাসপাতালগুলোতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের সংখ্যা এক লাফে আগের থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। রোগীদের মধ্যে বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণ এবং শিশুরাও রয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে এ ধরনের রোগীদের ভিড় লেগেই আছে। রোজই কেউ না কেউ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, বুকে টান ধরা এবং কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।
সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভি কুমার নামে ওখলার এক হাসপাতালের চিকিৎসক পিটিআইকে বলেন, ‘সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির রোগীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। এর জন্য সরাসরি বায়ুদূষণকে দায়ী করা যেতে পারে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, আগেও এমন উপসর্গ নিয়ে অনেকে আসতেন। তবে এখনকার উপসর্গগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী।
অভি আরও বলেন, ‘অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত চিকিৎসার পরেও তারা পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছেন না। উচ্চমাত্রার স্টেরয়েড এবং দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। আগে কখনও শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল না এমন রোগীরাও আসছেন, এটা আরও উদ্বেগের। বাইরে খেলাধুলো করার কারণে কিশোর ও তরুণরাও রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
চিকিৎসকদের কথায়, পিএম ২.৫, পিএম ১০, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ওজোন, সালফার ডাই অক্সাইড, যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য প্রভৃতি বায়ুদূষক ফুসফুসের মাধ্যমে দ্রুত রক্তে মিশে যায়। এর ফলে শরীরে প্রদাহ দেখা দেয়। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যের ওপর নানা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবও পড়ে।
এছাড়া দূষিত বাতাসে বেশিক্ষণ থাকলে শ্বাসনালির প্রদাহ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া এবং রক্তে শর্করার মাত্রার ওঠানামার মতো বিবিধ উপসর্গ দেখা দেয়। অনিল গোয়েল নামে আরেক চিকিৎসক পিটিআইকে বলেন, ‘ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। সকালে হাঁটতে বেরিয়ে কিংবা বাইরে শরীরচর্চার পরেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।’