ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তার দাবি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলে আসামের ভবিষ্যৎ কাঠামো ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সীমান্ত, অভিবাসন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার একটি সরকারি অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা যদি আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছাতে পারে, যাকে তিনি ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাওয়ার’ সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি জানান, গত পাঁচ বছর ধরেই তিনি এই প্রবণতা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশের এক নেতার উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্ন করা হলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বর্তমানে আসামে জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বলে তিনি দাবি করেন। তার ভাষায়, এই হার যদি আরও বাড়ে, তাহলে তা রাজ্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর একটি মন্তব্য ঘিরে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। ওই মন্তব্যে বলা হয়েছিল, নয়াদিল্লি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তাহলে ঢাকার উচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করে রাখা এবং সেখানে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলোকে সহায়তা দেওয়া।
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও দাবি করেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভৌগোলিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, কারণ অঞ্চলটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডরের ওপর নির্ভরশীল, যা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত।
এই বক্তব্যগুলোর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার মতো হুমকি ভারত মেনে নেবে না। তার মতে, এ ধরনের বক্তব্য অব্যাহত থাকলে দিল্লি নীরব থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আলাদা করে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত—এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও অবাস্তব। ভারত একটি বড় দেশ, পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি—এই বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। তাঁর ভাষায়, ভারতের বিরুদ্ধে এমন মনোভাব বা আচরণ হলে দেশটি নিশ্চুপ থাকবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর এসব বক্তব্য ঘিরে আসামসহ পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অভিবাসন, জনসংখ্যা পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।