সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পালিয়ে যাওয়া এবং তাকে দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি ভারতে ৪০ দিন পার করেছেন। শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে সেদেশের পত্রিকায়ও আলোচনা হচ্ছে।
এ বিষেয়ে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের দ্য ডন পত্রিকায় একটি নিবন্ধে লিখেছেন আইজাজ আহমদ চৌধুরী। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং ইসলামাবাদের সানোবার ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান।
নিবন্ধে আইজাজ আহমদ চৌধুরী লিখেছেন, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হাসিনা ভারতীয় আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করাকে বেছে নিয়েছিলেন এবং এটি ছিল স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশিদের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর।
তিনি লিখেছেন, ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ৪০ দিন পার হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ওপর হাসিনার সরকারের সহিংস দমন-পীড়নের প্রভাব থেকে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেছে। ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়নে ১ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনা কেন এত দ্রুত ক্ষমতায় তার দখল হারালেন এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবর্তনের ধরনও বুঝতে আগ্রহী বৈশ্বিক বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রসঙ্গে আইজাজ আহমদ চৌধুরী লিখেছেন- বাংলাদেশের সঙ্গে ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে সক্রিয় বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ হলো সীমান্ত নিরাপত্তা। ভারতের নেতাদের জন্য তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো- কীভাবে তাদের দেশে তারা হাসিনার উপস্থিতি সামলাবেন। যতদিন হাসিনা দিল্লিতে থাকবেন, ততদিন ঢাকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ২০১৩ সালে উভয় দেশ একটি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। আর সেই চুক্তি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে অনেকেই হাসিনাকে এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৯০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলার বিচারের জন্য তাকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে ভারতীয় গবেষক এবং দেশটির মিডিয়া রাজনৈতিক এই পট-পরিবর্তনটি বাংলাদেশকে মুসলিম মৌলবাদের দিকে ধাবিত করবে বলে প্রচার করছে এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলা করা হচ্ছে দাবি করছে। যদিও হামলার এসব খবরের বেশিরভাগই ছিল গুজব। শেখ হাসিনার অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ছাত্রদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে পরিবর্তন এসেছে, তাকে অসম্মান করাই মূলত ভারতের উদ্দেশ্য।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল করতে এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের এই পররাষ্ট্র সচিব। বাংলাদেশের এই পরিবর্তনে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত- এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যত্নশীল এবং তারা মনে করেন, নিজেদের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারকে তারা যেভাবে চান তাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করা উচিত। পাকিস্তান সন্তুষ্ট যে, হাসিনা আর (পাকিস্তানকে) মিথ্যা দোষারোপ করতে পারবে না বা একাত্তরের দুঃখজনক ঘটনাকে নিয়ে কোনো কারসাজিও করতে পারবে না। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে।