ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাওবাদী-বিরোধী অভিযান চালিয়ে ৩১ জন সশস্ত্র বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে। ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’ নামে এই বহুল আলোচিত ও সমন্বিত অভিযান পরিচালিত হয়েছে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের মধ্যবর্তী দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে, যা দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদীদের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
অভিযানে অংশ নেয় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF), কোবরা কমান্ডো ইউনিট, রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা-মোট প্রায় ২৬ হাজার সদস্য। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই অপারেশন ছিল সুপরিকল্পিত ও প্রযুক্তি-নির্ভর। ড্রোন নজরদারি, উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য এবং স্থানীয় সহযোগিতার মাধ্যমে মাওবাদীদের গোপন ঘাঁটি শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, অভিযানের সময় ২১৪টি মাওবাদী ঘাঁটি ও বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে শত শত বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ। মাটির নিচে লুকানো ছিল অনেক বিস্ফোরক এবং সুরঙ্গ, যেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ অভিযানকে ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মাত্র ২১ দিনের পরিকল্পিত প্রচেষ্টায় আমাদের সাহসী নিরাপত্তা বাহিনী মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিযান সম্পন্ন করেছে। এটি একটি নজিরবিহীন বিজয়। তিনি আরও জানান, এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ হতাহত হননি, যা এই অভিযানের সফলতা এবং দক্ষতার অন্যতম নিদর্শন।
অমিত শাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বার্তায় লেখেন, ‘কারেগুত্তালু পাহাড়ে পরিচালিত এই অভিযান মাওবাদী বিদ্রোহ দমনে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন। আমি এই কৃতিত্বের জন্য দেশের সাহসী নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় এই অভিযানের প্রশংসা করে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর পেশাদারিত্ব, ধৈর্য ও অসীম সাহসিকতায় পরিচালিত এই অভিযান ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলার প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় করেছে।
মাওবাদী বা নকশালপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অভ্যন্তরে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে, বিশেষত মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের জনবিচ্ছিন্ন ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায়। তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মাধ্যমে ‘গণযুদ্ধ’ পরিচালনার চেষ্টা করে, যার ফলে বহু পুলিশ ও বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’ অভিযান মাওবাদী আন্দোলনের ওপর একটি বড় ধাক্কা। তবে, তারা এটাও মনে করছেন যে কেবল সামরিক অভিযানই যথেষ্ট নয়- মাওবাদীদের প্রভাবমুক্ত করতে দরকার সমান্তরাল উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য টেকসই সামাজিক উদ্যোগ।