ফাঁস হওয়া ফোনালাপকে ঘিরে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় দেশটির সাংবিধানিক আদালত এই রায় দেন। তার বিরুদ্ধে পদচ্যুতি চেয়ে করা একটি মামলা বিচারাধীন থাকায় আদালত এই সিদ্ধান্ত নেয়।
আদালত ৭-২ ভোটে প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্তের পক্ষে রায় দেয় এবং তাকে ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুনগ্রুনগ্রুয়াংকিত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্রে জানা গেছে, ফোনালাপটিতে হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ বলে সম্বোধন করেন পায়েতংতার্ন এবং থাই সেনাবাহিনীর একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সমালোচনা করেন। এতে জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীল মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং তার অপসারণের জন্য আদালতে একটি আবেদন জমা পড়ে। এই ফোনকল ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার বিষয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় বেশ চাপে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হলে পায়েতংতার্ন হবেন সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় রাজনীতিক, যিনি মেয়াদ পূরণের আগেই ক্ষমতা হারাচ্ছেন। গত দুই দশক ধরে এই পরিবার দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তবে পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা মূলত ফিউ-থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন একটি জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই জোটের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই কম। দুই সপ্তাহ আগে এক প্রভাবশালী রক্ষণশীল শরিক দল এই জোট ত্যাগ করে।
৩৮ বছর বয়সী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী এবং তার ফুফুর পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। দেশের দুর্বল অর্থনীতিকে চাঙা করতে লড়াই করছিলেন তিনি। এ অবস্থায় তার জনপ্রিয়তা কমে গেছে। মার্চে তার জনপ্রিয়তা ছিল ৩০.৯ শতাংশ, গত সপ্তাহে তা নেমে এসেছে ৯.২ শতাংশ-এ।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে তার বক্তব্যের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, এটি ছিল ‘সীমান্ত বিরোধে আলোচনার একটি কৌশল।’ তবে রক্ষণশীল আইনপ্রণেতারা তাকে কম্বোডিয়ার কাছে নতি স্বীকার করা এবং থাই সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।
এদিকে এই রায় এসেছে এমন একদিনে যেদিন তার পিতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা নিজেও রাজনৈতিক সংকটে পড়েছেন। তাকে রাজপরিবারকে অবমাননা করার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরীয় একটি পত্রিকাকে ৯ বছর আগে দেয়া সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।